শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা
পরিস্থিতি সামলাতে \'৫৮ সালের আইন!

বিধিমালার অভাবে ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে জীবন বীমা

বিধিমালার অভাবে ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে জীবন বীমা

'বীমা আইন ২০১০' জারি হওয়ার পর পাঁচ বছরেও কোনো বিধিমালা হয়নি। ফলে সংস্থাটি নতুন আইনে এজেন্ট নিয়োগ করতে পারছে না। এমনকি আগে নিয়োগকৃত এজেন্টদের কমিশন দিতেও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে পড়েছে জীবন বীমা করপোরেশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন ১৯৫৮ সালের পুরনো বিধিমালায় কাজ চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি লিখে বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে '৫৮ সালের বিধিমালা অনুসরণের সুযোগ চেয়েছে দেশের জীবন বীমা খাতে সবচেয়ে বড় এই কোম্পানিটি। এ ব্যাপারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেন, 'এখন আর '৫৮ সালের বিধিমালায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন আইনে কোনো সমস্যা থাকলে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা হবে।

এ ব্যাপারে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডিআরএ) প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।' জানা গেছে, সুশৃঙ্খলভাবে বীমা খাত পরিচালনায় ১৯৩৮ সালের আইন বিলুপ্ত করে 'বীমা আইন-২০১০' জারি করে সরকার। তবে এ আইন বাস্তবায়নে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) পাঁচ বছরেও কোনো বিধিমালা জারি করতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ৬ নং আইন বলে জীবন বীমা করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে নতুন বীমা আইন হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই সংস্থাটি ১৯৩৮ সালের বীমা আইন এবং ১৯৫৮ সালের বীমা বিধির বিধান মোতাবেক বীমাপত্র সংগ্রহকারী এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এ ক্ষেত্রে জীবন বীমা করপোরেশন কর্তৃক নিয়োগকৃত বীমা এজেন্টদের অস্থায়ী লাইসেন্স দিত কন্ট্রোলার অব ইন্সুরেন্স (বর্তমানে বিলুপ্ত)। পরে সরকার ১৯৩৮ সালের বীমা আইন বিলুপ্ত করে বীমা আইন ২০১০ জারি করে। ওই আইন অনুযায়ী কন্ট্রোলার অব ইন্সুরেন্স বিলুপ্ত করে বীমা খাতের নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। নতুন আইনে এজেন্ট নিয়োগ সংক্রান্ত ১২৪ ধারায় বলা আছে, একজন বীমাকারী বা ব্রোকার ব্যক্তি বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও তার নিবন্ধন করবে। প্রত্যেক বীমাকারী বা ব্রোকার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বীমা এজেন্ট হিসেবে অনুরূপ সব নিয়োগ ও নিবন্ধনের একটি রেজিস্টার সংরক্ষণ করবে।

জানা যায়, এই ধারা অনুসারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো বিধিমালা প্রণয়ন ও জারি করতে পারেনি। ফলে নতুন আইনে এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারছে না জীবন বীমা করপোরেশন।

সূত্র জানায়, বিষয়টির সমাধানে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ সম্প্রতি জরুরি বৈঠক ডাকে। বৈঠকে ১৯৫৮ সালের বীমা বিধিমালা অনুসরণ করে বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও নিবন্ধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পর্ষদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ৭ জুলাই ১৯৫৮ সালের বিধিমালা অনুযায়ী এজেন্ট নিয়োগের সুযোগ চেয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায় জীবন বীমা করপোরেশন। তবে সে চিঠির কোনো জবাব দেয়নি বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। শেষে উপায়ন্তর না দেখে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন করপোরেশনের এমডি আবদুল মান্নান।

গত ২৬ জুলাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে জীবন বীমা করপোরেশনের এমডি আবদুল মান্নান উল্লেখ করেন, উদ্ভূত সমস্যার ফলে এজেন্টদের কমিশন বিল পরিশোধে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ন্যায্য পাওনা প্রাপ্তিতে বিলম্বের কারণে এজেন্টরাও নতুন পলিসি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

 

সর্বশেষ খবর