ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে রাশিয়া ফেডারেশনের সঙ্গে যৌথ বাণিজ্যিক কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে রাশিয়াসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কমনওয়েলথ অব দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিআইএস-বিসিসিআই) ও এফবিসিসিআই প্রতিনিধিরা রাশিয়া, কিরগিস্তান, উজবেকিস্তান এবং ইউক্রেনসহ ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ পরিদর্শন করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-রাশিয়া যৌথ বাণিজ্যিক কমিশন গঠন কার্যকরের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে। গত ২৭ জানুয়ারি অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদকে লেখা এক চিঠিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন সিআইএস-বিসিসিআইর সভাপতি এইচ কে কবীর।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে রাশিয়া বাংলাদেশের অনেকগুলো বৃহত্ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণ ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো ধরনের বাণিজ্যিক কমিশন বা মুক্তবাণিজ্য চুক্তি না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা বাধার মুখে পড়ছেন। ফলে এই যৌথ কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইপিবি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার বাজারে যে প্রধান ৮টি পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে— পোশাক খাতের ওভেন ও নিট, পাটজাত পণ্য ও কাঁচাপাট, কৃষিপণ্য, হিমায়িত মাছ, কেমিক্যাল পণ্য, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, অ্যালুমোনিয়াম ইত্যাদি। অন্যদিকে বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে— সার, কেমিক্যাল, সয়াবিন, মেটাল ও স্টিল, এয়ারক্রাফট, গাড়ি, রেলের যন্ত্রাংশ, অস্ত্র, তুলা, মেশিনারিজ, ইলেকট্র্রনিক্স ও পানীয় জাতীয় পণ্য।
ইপিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিগত ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ সময়ের এই পাঁচ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার বাজারে রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে। যেখানে ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ৯৬ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, সেখানে ৫ বছরে রপ্তানি বেড়ে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে মোট ২৯৪ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার। আর গত অর্থবছরে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে মোট ২২১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মূল্যের বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইএস-বিসিসিআইর সভাপতি এইচ কে কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সিআইএস এবং রাশিয়ান বাজারে নিয়ে যাচ্ছে সিআইএস-বিসিসিআই। দেশটির ব্যবসায়ীরা এ দেশে যৌথভাবে বিনিয়োগে আগ্রহী। কয়েক দিন আগেও তারা ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিল। কিন্তু এর জন্য বাংলাদেশ সরকারের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আশাবাদী সিআইএস-বিসিসিআই খুব দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার মধ্যে যে যৌথ কমিশন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও অনেক গুণ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।