বিশ্বের অনেক দেশে উেস কর হিসেবে বেতন-ভাতা খাতে কর আদায়ের হার ৫০ শতাংশের বেশি হলেও বাংলাদেশে উল্টো চিত্র। পে-রোল কর বা বেতন-ভাতা খাতে এখন কর ফাঁকি সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে উেস করের ২০ শতাংশ বেতন-ভাতা কর হিসেবে আসার কথা থাকলেও আসে মাত্র ৪ শতাংশ। এনবিআরের মূল্যায়নে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মূল্যায়নে আরও বলা হয়, উেস কর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস। এ উেস কর খাতেই এখন ফাঁকি সবচেয়ে বেশি। যদিও বাংলাদেশে বেতন-ভাতার হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব একটা কম নয়। এ প্রসঙ্গে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ) আবদুর রাজ্জাক সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগে অনেকে উেস করের রিটার্ন দেরিতে জমা দিত। অনেকে জমা দিত না। এখনো উেস কর খাতে অনেক ফাঁকি আছে। কিন্তু আমাদের মনিটরিংয়ের কারণে উেস কর ফাঁকি আগের চেয়ে কমছে।’
জানা গেছে, সারা দেশে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বা উপকর কমিশনারদের কাছে উেস কর নিয়ে মূল্যায়ন তুলে ধরে এনবিআর আরও বলেছে, পে-রোলসহ অন্যান্য উেস করের ফাঁকি রোধে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি বেতনভোগীদের অনলাইনে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয়কর আইনের ৩০ ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১০৮ ধারার অধীনে দেওয়া আয়কর বিবরণী যুগোপযোগী করা হয়েছে। উেস করের রিটার্ন ফরম আধুনিক করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো উেস করের রিটার্ন অডিটের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। এমনকি উেস কর ঠিকমতো সংগ্রহ না করলে বা সংগৃহীত কর সরকারি কোষাগারে জমা না দিলে দায়দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। জানা গেছে, রাজস্ব আয়ের বড় অংশ আসে আয়কর থেকে। আর আয়করের বড় অংশই আসে উেস কর থেকে। সারা বিশ্বেই রাজস্বের অন্যতম বড় খাত উেস কর। নতুন নতুন খাতকে উেস করের আওতায় আনা হলে রাজস্ব আয় অনেক বাড়বে। এনবিআরের কাজে গতি আসবে। সব করদাতার বাড়িতে গিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ কঠিন কাজ। তাই কর ফাঁকির সুযোগ থেকেই যায়। সেজন্য উেস কর কর্তনই ভালো পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে কেবল প্রয়োজন মনিটরিং জোরদার করা। কর বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে আয়করের ৫৪ শতাংশই আসে উেস কর কর্তনের মাধ্যমে। এই উৎস থেকে রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে চায় এনবিআর। কারণ উেস কর কর্তন রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে তুলনামূলক সহজ উপায়। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি পাশের দেশ ভারতেও রাজস্বের একটি বড় অংশ আসে উেস কর থেকে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে উেস কর কর্তনের আওতা বাড়ানোকেই যুক্তিযুক্ত মনে করছে কর প্রশাসন। এ লক্ষ্য সামনে রেখে নতুন নতুন খাত এর আওতাভুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আয়করের একটি বড় অংশ উেস কর কর্তনের মাধ্যমে আদায় সম্ভব। তাই এর আওতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বিগত ২০০৭-০৮ অর্থবছরে কর ফাঁকি রোধে বেশকিছু নতুন খাতকে উেস করের আওতায় আনা হয়েছিল। গত অর্থবছরেও কিছু নতুন খাত উেস করের আওতায় আনা হয়। খেয়াল রাখতে হবে, যেসব প্রতিষ্ঠানকে উেস কর কর্তনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কিনা। এজন্য মনিটরিং জোরদার করতে হবে।