বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে

১৫ বছরের মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় এবং ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে

রুহুল আমিন রাসেল

দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইকোনমিক জোনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় চীন, ভারত, জাপানসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেশের অর্থনীতিতে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন— এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা দেশে ব্যাপক শিল্পায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন, তা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই শিল্প গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে, যা আগামী দিনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সুবার্তা দেবে।’ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ—বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের বেসরকারি খাত দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। এখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে।’ বেজাসূত্র জানায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৫ বছরের মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় এবং ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেজা ইতিমধ্যে ১৫টি প্রাইভেট অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স প্রদান করেছে। ৪টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দিয়েছে বেজা। এ ছাড়া মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডেভেলপার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল (প্রথম পর্যায়) ডেভেলপার নিয়োগের জন্য নির্বাচিত ডেভেলপারকে লেটার অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। নাফ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের ২১২ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যেখানে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৪৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এ ছাড়া মিরসরাই ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ অঞ্চল দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জিডিপি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বেজার ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, সরকার যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজ করছে, তার মধ্যে ৬৬টির জমি পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর জমি সংগ্রহের কাজ চলছে। এ ৬৬টির মধ্যে ১১টির মালিক বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। বাকি ৫১টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন।

অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে প্রণোদনা ও সুবিধা অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৫ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা দেবে সরকার। এর মধ্যে প্রথম ১০ বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিলের ওপর কোনো প্রকার ভ্যাট আরোপ করা হবে না ১০ বছর। পেট্রোলিয়াম পণ্য ছাড়া সকল প্রকার কেনায় ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ থাকবে। লাগবে না শুল্ককর। স্ট্যাম্পকর মওকুফসহ আরও সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন হারে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা পাবে। শূন্য শুল্কে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, নির্মাণসামগ্রী আমদানির সুবিধা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর