৬ জুলাই, ২০২৪ ১৯:৪৫
কুমিল্লায় সেলাই মেশিন পেয়ে উচ্ছ্বসিত ২০০ অসচ্ছল নারী

বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সবাই হবেন স্বাবলম্বী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সবাই হবেন স্বাবলম্বী

২৯ জুন সকাল ১১টা। সকাল থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। তার পরও ততক্ষণে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ (উচ্চ মাধ্যমিক শাখা) অডিটরিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। কুমিল্লার ১০টি উপজেলা থেকে ২০০ নারী এসেছেন এখানে।

তাদের সঙ্গে একজন করে অভিভাবক। কারো কারো সঙ্গে আদরের সন্তানটিকেও নিয়ে এসেছেন। সবার মুখেই সুখের হাসি। কিছুক্ষণ পরেই বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে একটি করে সেলাই মেশিন।

এই নারীদের সবাই অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা। তাদের চোখে এখন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন। অতিথিরা এলেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ২০০ অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়। এসময় উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন তারা। এর আগে বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনা মূল্যে তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এই নারীরা।

ওই দিন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশিষ্টজন ও অতিথিরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন তুলে দেন প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের হাতে। অনুষ্ঠান সকাল ১১টায় শুরু হলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই সেলাই মেশিন নিতে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন উপকারভোগীরা। এসময় তাদের চোখেমুখে ভেসে উঠেছে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন।

অনুষ্ঠানে আসা অতিথি ও অসচ্ছল নারীরা বলেন, শুধু স্বপ্ন নয়, নতুন মেশিন দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কুমিল্লার হোমনা, দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা, দেবীদ্বার, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার ২০০ অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে।

স্বাগত বক্তব্যে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় পরিচালিত বসুন্ধরা শুভসংঘের নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবু জাফর খান, বসুন্ধরা শুভসংঘ, কুমিল্লার প্রধান উপদেষ্টা এবং সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. তারিকুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনরা। উপস্থিত সবাই এমন উদ্যোগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘের মানবিক কাজের প্রশংসা করেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপ অসচ্ছল নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা বলেন, আশা করি, ভবিষ্যতেও দেশ ও মানুষের কল্যাণে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। সেলাই মেশিন নিতে আসা উপকারভোগীদের একজন শতাব্দী সূত্রধর। তিনি এসেছেন কুমিল্লার চান্দিনা থেকে। তার অনুভূতি প্রকাশ করে শতাব্দী বলেন, ‘আমি একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা নেই। মায়ের একার পক্ষে ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। আমার স্বপ্ন ছিল পরিবারের পাশে দাঁঁড়াব। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে। এটা দিয়ে এখন পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব এবং আমার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারব।’ 

আরেক উপকারভোগী মারিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা তিন ভাই ও এক বোন। আমার মা তিন বছর আগে মারা গেছেন। আমার স্বপ্ন ছিল আরো অনেক দূর এগিয়ে যাব, কিন্তু পরিবারের দায়িত্ব চলে আসে আমার কাঁধে। তার পরও পড়ালেখা বন্ধ করিনি। যেখানে মানুষ ফ্রিতে পরামর্শও দেয় না আজকাল, সেখানে বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের ফ্রিতে প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন দিয়েছে। আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাই মেশিনে কাজ করে স্বপ্নগুলো পূরণ করে যাব। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।’ 

পূজা নাহার বলেন, ‘আমি গরিব পরিবারের সন্তান। বাবা অসুস্থ। আমাদের দুই ভাই-বোনের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এই বিপদের সময় বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন উপহার পেয়ে আমি এখন পড়ালেখা চালাতে পারব এবং পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব। বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’ 

দেবীদ্বার থেকে আসা শর্মী ইলমে জাহান বলেন, ‘দরিদ্র মানুষকে সবাই উপহাস করে, অনেকেই দরিদ্রদের দিকে আড়চোখে তাকায়। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ পেয়ে সেলাই মেশিনও পেয়েছি। এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। ধন্যবাদ জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে।’  

স্বপ্না আক্তার বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় উদ্যোক্তা হব। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে সেই স্বপ্নপূরণের পথ পেয়েছি।’ 

লালমাই উপজেলার আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা একজন চায়ের দোকানি। বাবার পক্ষে সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আগ্রহ থাকার পরও সেলাই প্রশিক্ষণ নিতে চাইনি। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাকে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছে। এখন আমাকে একটি মেশিন দিয়েছে। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’ 

দাউদকান্দি উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা বিলকিস বেগম বলেন, ‘অল্প বয়সে দুটি সন্তান রেখে স্বামী আমাকে ফেলে চলে গেছেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাই। বসুন্ধরার মালিক আমাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে এখন সেলাই মেশিন দিয়েছে। এখন আমি সেলাইয়ের কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব।’ 

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জোসনা আক্তার বলেন, ‘বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ পেয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে নতুন সেলাই মেশিন পেয়েছি। এখন থেকে নিয়মিত সেলাইয়ের কাজ করব। আয় করে আমার সংসারের অভাব দূর করব। সচ্ছলতা ফিরবে আমাদের সংসারে। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে ধন্যবাদ জানাই।’

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর