রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২ ০০:০০ টা

\'শত কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে\'

\'শত কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে\'
শত শত কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে। বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। ইকোনমিস্টের মতো বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার, ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অথচ, কয়েক বছর আগে এই ইকোনমিস্ট পত্রিকাই আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে, মতিউর রহমান নিজামীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে রিপোর্ট করেছে। নিজেদের গা বাঁচাতে জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু, আমাদের তো এটা মোকাবিলা করতে হবে। দেশের ভেতরে রাজনৈতিকভাবে যেমন মোকাবিলা করতে হবে, বিদেশেও কূটনীতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু, কূটনৈতিক মিশনগুলো এ ব্যাপারে কোনো কাজই করতে পারছে না। শুক্রবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর'র সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক অনুষ্ঠান 'একাত্তর জার্নাল'-এ ঘাতক দালাল নিমর্ূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির এসব কথা বলেন। নবনিতা চৌধুরীর সঞ্চালনায় তিনি বলেন, আমেরিকা বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত পক্ষে টানতে লবিস্ট নিয়োগ করে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে এটি আমাদেরও দরকার ছিল। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে আমাদের দুইটা দূতাবাসেই লোকবল সংকট। যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে লবিং করার ক্ষমতা তাদের নেই।অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক কাজী সিরাজ। তিনি বলেন, ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেখেই মনে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও ষড়যন্ত্র চলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিল, তাদের কেউ মারা গেছে, অন্যরা পাকিস্তানে চলে গেছে_ এ বক্তব্য ভিত্তিহীন। শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালেও জামায়াতের লোক ঢুকে পড়ছে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময় এমন একজনকে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা করা হলো, যে জামায়াতের সদস্য। ছাত্রজীবনে ছাত্রসংঘ করেছে। আমরা অভিযোগ করলাম। পরে আমির হোসেন আমু অভিযোগ করলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, দ্রুত যুদ্ধাপরাধের বিচার শেষ করা দরকার। এ বিচার করতেই ২০০৮ সালে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। এছাড়া আইন করে ট্রাইব্যুনালকে স্থায়ী রূপ দেওয়া দরকার। যাতে তথ্য-প্রমাণসহ একজন যুদ্ধাপরাধী বেঁচে থাকা পর্যন্ত এ বিচার চলতে থাকে। রাজাকারদের তালিকা তৈরির তাগিদ দিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মধ্যে হাতেগোনা অল্পকিছু যুদ্ধাপরাধী ছিল। তাদের তালিকা থাকাটা জরুরি ছিল। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জামায়াতকে ছেড়ে ক্ষমতায় যেতে পারবে কিনা_ এ সংশয়ের কারণে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলছে। তবে এ নিয়ে তৃণমূলে বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে। জামায়াতের অন্যায়ের দায় কাঁধে তুলে নেওয়া বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীই পছন্দ করছেন না। জামায়াতের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, সংবিধান অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকলে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উসকানি দিলে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। এছাড়া জামায়াতের গঠনতন্ত্রও আমাদের সংবিধান থেকে ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত। সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো জামায়াতের প্রকাশ্য সেলের চেয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড সেল শক্তিশালী। এরা ক্ষমতায় থাকাকালীন শতাধিক জঙ্গিবাদী সংগঠন দাঁড় করিয়েছে। সবগুলো এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। সুতরাং, জামায়াত আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলে আহামরি ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। শুধু তারা নিষিদ্ধ হয়ে গেলে তাদের অর্থনৈতিক উৎসগুলো সরকারের অধীনে নিয়ে নিতে হবে। জার্মানিতে নাৎসিদের বিচারের পর তাদের সব সম্পত্তি সরকারের হাতে চলে আসে।

সর্বশেষ খবর