রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

‘নানা চিন্তা-চেতনা প্রচেষ্টায় সবার সেরা স্থান পেয়েছি’

‘নানা চিন্তা-চেতনা প্রচেষ্টায় সবার সেরা স্থান পেয়েছি’

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা

সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বোর্ডে এসএসসিতে এ বছর প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এর আগে ২০১২ সালে এসএসসিতে দ্বিতীয় সেরা হয়েছিল। এর পর থেকে সবার সেরা হওয়ার জন্য মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিল সব শিক্ষকের। সেই থেকে ২০১৩ সালের শেষের দিকে শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়ন ও ভালো ফলের জন্য চালু করা হয় নিউক্লিয়ার এডুকেশন টিম; যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এবারের ফলাফলে। এ বছর এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৪১৭ জনের মধ্যে ৪১৫ জনই পেয়েছে জিপিএ-৫। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩০১ জনের মধ্যে ২৯৩ ও মানবিকে ৬১ জনের মধ্যে ৩২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর শতভাগ পাসের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ৯৪.৯৯ শতাংশ জিপিএ-৫ রয়েছে।
প্রথম হওয়ায় নিজের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার এ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বোর্ডে সেরা হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এর আগে যখন ২০১২ সালে এটি দ্বিতীয় হয়েছিল তখন থেকে আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করি প্রথম হওয়ার জন্য। নানা চিন্তা-চেতনা এবং পরিকল্পনার পর আমরা তা অর্জন করতে পেরেছি। আশা করি এ অবস্থান ধরে রাখতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণির সন্তানরা পড়ালেখা করতে আসে না। এখানে যেসব সন্তান আসে তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত, সরকারি কর্মচারী, গার্মেন্ট, পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবারের; যারা প্রাইভেট পড়তে পারে না সামর্থ্যরে অভাবে। আমরা তাদের সঙ্গে নিয়েই জয় করতে পেরেছি। তা ছাড়া আমাদের এখানকার কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হতো না। সেভাবেই তত্ত্বাবধান করা হতো।’

প্রথম হওয়ার পেছনে নিউক্লিয়ার এডুকেশন টিম গঠনের অবদানের কথা ব্যক্ত করে অধ্যক্ষ আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি ১৫ জনে একজন শিক্ষক দেওয়া হতো তত্ত্বাবধানের জন্য। ওই শিক্ষক সেসব শিক্ষার্থীর ক্লাসে আসা থেকে বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত সার্বিক বিষয় দেখভাল করতেন। এ ছাড়াও ক্লাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি ফরম দেওয়া হতো যে কোনো শিক্ষকের ব্যাপারে তাদের কোনো নেতিবাচক মন্তব্য আছে কি না সে বিষয়টি জানার জন্য। আর প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হতো এবং নানা সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহে একবার করে বসতেন; যার কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো শিক্ষার্থীর পরিবার ও শিক্ষকদের মধ্যে ভালো সমন্বয় ছিল বলেই এতদূর আসা।
ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিয়মিতকরণের জন্য এসএমএস পদ্ধতি চালু এবং তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের একটি টিম কাজ করত। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা খুঁজে বের করে শ্রেণিকক্ষে বা বাসায় গিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নের পর অভিভাবকদের দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা দূর করার জন্য বিশেষ মনোযোগও দেন শিক্ষকরা। এভাবে দশম শ্রেণিতে ওঠার পর শুধু মডেল টেস্ট নেওয়া হতো।
তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের আন্তরিকতা, শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায় আর শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের এ অবস্থান।’
সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন জানান, ‘এখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক ভালো। শিক্ষার্থীদের ছুটি, উপস্থিতি, অনুপস্থিতি এমনকি অন্যান্য দরকারি তথ্য এডু স্মার্টের মাধ্যমে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে খুদে বার্তায় জানানো হতো। প্রতি শনিবার কুইজ পরীক্ষা এবং বৃহস্পতিবার নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা নেওয়া হতো। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার রুটিন আমরা করে দিতাম। আর এখানকার ২৫০ জন শিক্ষক সবাই সেবা সহযোগিতার ব্যাপারে ইয়াং এনার্জিটিক।’

সর্বশেষ খবর