বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

আমি তাদের চাইতে অনেক বড় মুসলমান

গাফ্‌ফার চৌধুরী

'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গানের রচয়িতা ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। গতকাল যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের চেয়ে আমি অনেক বড় মুসলমান। খবর : এনআরবি নিউজ।

বিবৃতিতে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেন, ৩ জুলাই নিউইয়র্কে একটি একাডেমিক আলোচনা সভায় আমি যে বক্তব্য দিয়েছি সেটাকে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক মৌলবাদী দল রাজনৈতিক পুঁজি করেছে এবং মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। তারা বলেছে, 'আমি ধর্মবিরোধী; রসুল, ইসলাম এমনকি আল্লাহকে অবমাননা করেছি। কোনো সাধারণ মানুষের আল্লাহকে অবমাননা করার শক্তি আছে? এটা প্রচার করাও ধর্মদ্রোহিতা এবং এ তথাকথিত ইসলামপন্থিরা এটাই প্রচার করছে। আমি নিজে মাত্র গত ফেব্রুয়ারি মাসে উমরাহ করেছি। সেই ব্যক্তি নিউইয়র্কে এসে ধর্মদ্রোহিতা করবে কি কারণে? আমার যারা নিন্দা করছেন তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ তারা আমার বক্তব্যটা সম্পূর্ণ পড়ুন, তারপর যদি মনে করেন যে আমি ধর্ম, আল্লাহ ও রসুলের বিরুদ্ধে কিছু বলেছি, তখন তার শাস্তি বিধান করুন। কিন্তু এর আগে বিনাবিচারে একশ্রেণির মোল্লার উসকানিতে, রাজনৈতিক উদ্দেশে তারা যা করছেন এটার নিন্দা করার ভাষা আমার জানা নেই।

তারা আমাকে ছোট করেননি, তারা ধর্মকে, আল্লাহর রসুলকেই ছোট করছেন। আমি আল্লাহর ৯৯ নাম সম্পর্কে দেবতাদের নাম বলিনি, আমি বলেছি কালচারাল এসিমিলেশন কীভাবে প্রত্যেকটি সভ্যতা, এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতা উপকরণ গ্রহণ করে। বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা বলা হয়, এটা যে সত্য না এটা প্রমাণ করার জন্য বলেছিলাম যে, আরবি ভাষাও ছিল এককালীন কাফেরদের ভাষা। এটা বলা কি আরবি ভাষার অবমাননা। তারপর বলেছি, আল্লাহর গুণাত্মক নামগুলো আগে কাফেরদের দেবতাদেরও ছিল। তা না হলে রসুলুল্লাহর পিতার নাম আবদুল্লাহ কী করে হন। এটা তো আর মুসলমান নাম নয়, সেখানে আল্লাহ আছে, সে আল্লাহ ছিল কাবা শরিফের কাবার প্রতিষ্ঠিত মূর্তিগুলোর ভিতরে প্রধান মূর্তির নাম। অবশ্য কেউ কেউ এটাকে ইলাহ বলে, ইলাহ থেকে আল্লাহ শব্দের উৎপত্তি। এভাবে আল্লাহর রসুল আরবের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেটা ধর্মবিরোধী নয় সেটাকে তিনি গ্রহণ করেছেন। এমনকি হজও ইসলামের হজ নয়, এটাও সেই দুই হাজার তিন হাজার বছর আগের কাফেরদের দ্বারা প্রবর্তিত হজ, উনি সেখানে এক ঈশ্বর বার্তাটি যুক্ত করেছেন। এটাই আমি বলেছি। এটা হচ্ছে একাডেমিক আলোচনা এবং আমি সাহাবাদের সম্পর্কে কোনো কটূক্তিই করিনি।

বিবৃতিতে গাফ্‌ফার চৌধুরী আরও বলেন, আমি বলেছি, আমরা আরবি ভাষা না জেনে, আরবিতে সন্তানদের নামকরণ করি সেটা ভুল। আমাদের নামকরণের অর্থ জানা উচিত, যেমন আবু হোরায়রা। এটা রসুলুল্লাহর সাহাবার প্রকৃত নাম নয়। রসুলুল্লাহ তাকে ঠাট্টা করে বিড়ালের বাবা ডাকতেন। এখন আমরা যেহেতু আরবি জানি না, সেই বিড়ালের বাবার নামটা আমরা রাখি। এভাবে আরবি ভাষা না জানার জন্য অনেক বিভ্রান্তি হয় আমাদের দেশে। মোজাক্কার মোয়ান্নাস বুঝতে পারি না আরবের, সে জন্য আমরা স্ত্রীলোকের নাম রাখি তারও উদাহরণ দিয়েছি। তারপর আবার রসুল শব্দকে মনে করি রসুল বললেই বুঝি আমাদের রসুলুল্লাহকে অবমাননা করা হয়। অথচ পণ্ডিত নেহেরু যখন সৌদি আরবে যান তখন তাকে বলা হয়েছিল মারহাবা ইয়া রসুলে সালাম, 'হে শান্তির দূত তোমাকে সংবর্ধনা জানাই'। অথচ বাংলাদেশে গিয়ে যদি কেউ বলে রসুল মানে অ্যাম্বাসেডর তাকে মুরতাদ বলা হবে। এই যারা আজকে মুরতাদ বলছেন তারা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আজকে তারা ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মের অবমাননা করছেন। আমি এদের শাস্তি চাই। যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, বাংলাদেশে ত্রিশ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, তারা পরবর্তীকালে সবরকম মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ইসলামের নাম করে ব্যবসা করছে, ব্যাংক করছে, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি করছে এবং আজকে যারা এই ধর্মকে আবার রাজনৈতিক পুঁজি করেছে তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি তাদের চাইতে অনেক বড় মুসলমান।

 

সর্বশেষ খবর