রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেখা হইবে না মোর ছোট দিদির সাথে

বিলুপ্ত ছিটজুড়ে আর্তি

রেজাউল করিম মানিক, উত্তর গোতামারী ছিট থেকে ফিরে

স্বামী-সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে ভারত যেতেই হবে। বাবা-মাকে ছেড়ে ভারত যেতে বেশ কষ্ট হচ্ছে ছবিতার। ছবিতা তার বাবা-মাকে হয়তো আর কোনো দিন দেখতে পারবে না। এটাই হয়তো হবে শেষ দেখা, শেষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। সদ্যবিলুপ্ত উত্তর গোতামারী ছিটমহলে ভারত যেতে ইচ্ছুক রতনের স্ত্রী ছবিতা রানীকে বিদায় জানাতে গতকাল পাটগ্রাম থেকে এসেছেন একমাত্র ভাই কামিনী কান্ত রায়। কামিনী কান্ত কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মুই মোর ছোট দিদিটাকে আসি দেখির পাইম না। অ্যালা তো ভারতে যাইতে লাগবে ভিসা। প্রতি মাসে বাংলাদেশে থাকাতে একবার দেখি যাই মোর ছোট মনাটাক। ভারত গেলে অ্যালা এই ভিসার টাকা কোটে পাইম। হয়তো আর দেখা হইবে না মোর ছোট দিদির সাথে।’ এমন চিত্র লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সদ্যবিলুপ্ত উত্তর গোতামারী ১৩৬ নম্বর ছিটমহলে প্রায় প্রতিটা পরিবারে। অধুনালুপ্ত ছিটমহলের ভারত গমনেচ্ছু প্রথম দল নতুন বাংলাদেশি ভ‚খণ্ড ত্যাগ করবেন আগামীকাল সোমবার সকালে। তাই সদ্যবিলুপ্ত ছিটজুড়ে বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর। চলছে আর্তি। পরিবারের স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-পড়শিদের কাছ থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছেন ভারত যেতে ইচ্ছুক অধুনালুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা। প্রতিদিন স্বজন আর বন্ধুবান্ধব এসে একে অপরকে শেষ বিদায়, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিবেদন করছেন। চলছে আপ্যায়নও। বড়দের মতো পরিবারের ছোটরাও সহপাঠীদের গলা জড়িয়ে একে অপরকে বিদায় জানাচ্ছে। অন্যদিকে দেখা গেছে, নিজের বসতবাড়ির স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে মূল্যবান জিনিসপত্র সাজগোছ করতে ব্যস্ত কেউ কেউ। কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে ভারতে নিতে তৈরি নিজের বাঁশঝাড়ের বাঁশের জিনিসপত্র। কেউ কেউ আধাপাকা আমন ধান কেটে চিঁড়া-মুড়ি, পিঠা-পুলি তৈরি করছেন সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এভাবেই বিদায়ের সুর বেজে উঠেছে লালমনিরহাটের ৫৯টি অধুনালুপ্ত ছিটমহলে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর