বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শরণার্থীদের মধ্যে প্যারিস ম্যাসাকার আতঙ্ক

আ স ম মাসুম, গ্রিস বর্ডার থেকে

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সাত বছরের সিরীয় শিশু আয়লান আল কুর্দির মৃতদেহ সাগরে ভেসে আসা ছবিতে পাল্টে যায় সারা পৃথিবীর দৃশ্যপট! সিরীয় শরণার্থীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকা ইউরোপের সব দেশের মনোভাবে পরিবর্তন আসে। জার্মানি প্রথম ঘোষণা দেয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার। ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম ১০ হাজার শরণার্থী প্রবেশ করে জার্মানিতে। ৬ সেপ্টেম্বর জার্মানির মিউনিখে হাফবানোফ স্টেশনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে চোখে পড়ে শত শত জার্মান যারা অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন শরণার্থীদের। কেউ বাসা থেকে নিয়ে এসেছেন খাবার বানিয়ে, কেউ বা স্থানীয় দোকান থেকে কফি, চা, পিজা এনে খাইয়েছেন। মানবতার এক অপূর্ব নিদর্শন দেখিয়েছেন জার্মানির মানুষ। ইয়োটা নামের এক তরুণ হঠাৎ কাছে এসে প্রশ্ন করেন, এই যে এত মানুষ শরণার্থী হিসেবে ঢুকছে এরা সবাই কি আসলেই শরণার্থী! এক অজানা আতঙ্ক প্রশ্নের মধ্যে ছুড়ে দিয়েছিলেন সেই কম্পিউটার প্রকৌশলী তরুণ! ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় সংবাদ শিরোনাম হয়Ñ শরণার্থীদের সুযোগে আইএস ঢুকছে! প্যারিস ম্যাসাকারের পর মূল ঘটনাকারীর নামের তালিকায় এসেছে এক আইএস জঙ্গির! যে মধ্য অক্টোবরে এসেছে একজন সিরীয় শরণার্থীর নাম নিয়ে গ্রিসের লেসভস দ্বীপ হয়ে! আপাতদৃষ্টিতে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকলেও শরণার্থী পালে প্যারিস হামলার বাতাস লেগেছে বেশ জোরেশোরেই। অন্তত গত দুই দিন ম্যাসিডোনিয়া-সার্বিয়া বর্ডার থাভানবসি এবং গ্রিস-ম্যাসিডোনিয়া বর্ডার গ্যাবগেলিয়াতে সেই উত্তাপ টের পাওয়া গেছে বেশ ভালোভাবেই। গত সপ্তাহের চেয়ে বর্তমানে নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেক বেশি কড়াকড়ি। সেই সঙ্গে শরণার্থীদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ রয়েছে প্যারিসের হত্যাকাণ্ড নিয়ে। তারা বেশ বুঝতে পারছেন যে তাদের সঙ্গে যে আচরণ হচ্ছে সেটা সেই হত্যাকাণ্ডের ফসল। তারা ভয় পাচ্ছেন, অস্থিরতায় কাটাচ্ছেন পুরোটা সময়।

কথা হয় আবুদ নামের এক তরুণের সঙ্গে। তারা পাঁচ বন্ধু জীবন বাঁচাতে চলে এসেছেন ইউরোপে। আবুদ বলছিলেন, প্যারিসে যে হামলা হলো তা অবশ্যই ন্যক্কারজনক। একজন মুসলমান হিসেবে আমি এটা সমর্থন করি না। এ হামলায় জড়িত একজন তাদের মতোই শরণার্থী হিসেবে এসেছিলেন এ কথা জানার পর আবুদ বলেন, আমি জানি না আমাদের গ্র“পের ১ হাজার শরণার্থীর মধ্যে কতজন এসে ঢুকেছে! প্যারিসের ঘটনা জানার পর থেকেই ভয়ে হাত-পা কাঁপছে বলেও জানান আবুদ।

কথা হয় সিরিয়া থেকে আসা আলিজা নামের এক মধ্যবয়সী শরণার্থীর সঙ্গে। ভয় আর শঙ্কায় কাটছে সময়, কখন পরবর্তী দেশের সীমান্ত বন্ধ হয়! কখন জার্মানির সীমানা বন্ধ হবে কে জানে! এমন আশঙ্কায় সবাই চিন্তিত।

আলিজার সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম তখন পাশে দাঁড়ানো আলবেনিয়ার মানবাধিকার কর্মী ইয়াসমিন বলছিলেন, পাঁচ মাস ধরে এ বর্ডারগুলোতে শরণার্থীদের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছি আমরা। প্যারিস হামলার পর যখন জানলাম একজন শরণার্থী হিসেবে আইএস ঢুকে এ হামলা করেছে তখন বার বার মনে হচ্ছে আমি হয়তো সেই আইএস সদস্যকে নিজ হাতে খাইয়ে এই পথে এগিয়ে দিয়েছি। এখন যাদের দেখি তাদেরই আইএস মনে হয়!

সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ তরুণ প্রকৌশলী ইয়োটার শান্ত স্বরে বলা সেই কথাকে আশঙ্কায় নিয়ে এসে ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় প্রকাশিত রিপোর্ট মধ্য নভেম্বরে এসে অনেক চড়া দাম দিয়ে বুঝেছে মূলধারার সংবাদপত্র তথা সারা পৃথিবী!

সর্বশেষ খবর