শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পিরোজপুরে সাবেক এমপির বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিরোজপুরের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহ আলমের গ্রামের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলাকারীরা ঘরের ভিতরে ঢুকে ব্যাপক আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। মঙ্গলবার রাতে স্বরূপকাঠির ইন্দেরহাট গ্রামে এ হামলার পর সাবেক এমপির পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন ওই বাড়ির ভাড়াটিয়ারাও। এ হামলায় সদর আসনের বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের ক্যাডার বাহিনী জড়িত বলে দাবি করেছেন সাবেক এমপি শাহ আলম। ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এমপির একাধিপত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তার বাড়িতে এ হামলা হয়েছে বলে জানান সাবেক এমপি শাহ আলম। তিনি ইতিমধ্যে পুলিশকেও ঘটনাটি জানিয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

শাহ আলমের পারিবারিক সূত্র জানায়, ইন্দেরহাটে শাহ আলমের গ্রামের বাড়ির নিচতলা সাধারণত তালাবদ্ধ থাকে। দোতলায় থাকেন ভাড়াটিয়ারা। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ১০-১৫ জনের একটি দল ওই বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ির সামনে থাকা পুকুরঘাট, সেখানে বসার বেঞ্চ এবং বাড়ির গেট ভাঙচুর করে। ভাঙচুর শেষে হামলাকারীরা ঘরের সামনে দুটি ব্যানার লাগিয়ে যায়। ব্যানারে এমপি আউয়াল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। আর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এমপির দুই ঘনিষ্ঠ তন্ময় ও সৌরভ। এরা এমপির ক্যাডার হিসেবেই চিহ্নিত। একপর্যায়ে বাড়ির গেটে কয়েকটি টায়ার ঝুলিয়ে তাতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে হামলাকারীরা। তখন আশপাশের লোকজন বেরিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ১১ ডিসেম্বর দীর্ঘ ২৩ বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও যাতে একটি সমঝোতার কমিটি হয় সে ব্যাপারে চেষ্টা করেন সাবেক এমপি শাহ আলম। যদিও সে চেষ্টা সফল হয়নি। এমপি আউয়াল তার ইচ্ছামতো কমিটি করে নিয়েছেন। সেই বিরোধিতার জেরেই হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা মনে করেন। শাহ আলম বিষয়টি পিরোজপুরের পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছেন। দলের কেন্দ্রের কাছেও অভিযোগ করবেন।

স্বরূপকাঠি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম একটি অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়। তা ছাড়া সাবেক এমপি মহোদয়কে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাত্র চার দিনের মাথায় হামলার ঘটনায় পিরোজপুরে এমপি আউয়ালের বিপক্ষ শিবিরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, বিরোধিতা করলেই এমপি আউয়ালের ক্যাডার বাহিনী কর্তৃক হামলার শিকার হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। ১০ ডিসেম্বর রাতে বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জসিমউদ্দিন খানের বাড়িতে বোমা হামলা করা হয়। ওই ঘটনায়ও এমপির লোকজন জড়িত। একই রাতে ঢিল ছোড়া হয়েছে সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকজনের বাসায়। এর আগে দফায় দফায় হামলার শিকার হয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা গোলাম হায়দার। তারা বলেন, ‘এমপির বিপক্ষে থাকা সাধারণ নেতা-কর্মীরা যে কী পরিস্থিতিতে রয়েছেন তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কেন্দ্রের উচিত এখনই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া। নইলে আমাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

সর্বশেষ খবর