বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধর্মগুরুর আচরণ জানোয়ারের মতো বলে মন্তব্য বিচারকের

প্রতিদিন ডেস্ক

ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে সোমবার হরিয়ানা রাজ্যের বিশেষ আদালত মোট ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। বিচারক শুধু জেলের সাজা শুনিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। এমন সব মন্তব্য করেছেন বিচারক, যা একরকম কাঁপিয়ে দিয়েছে একদা প্রবল পরাক্রান্ত এই ধর্মগুরুকে। বিচারক বলেন, ‘তার আচরণ ছিল বন্য পশুর মতো...ধর্মীয় সংস্থার শীর্ষস্থানে বসে থেকে তিনি যে ধরনের জঘন্য অপরাধ করেছেন, তা আদিকাল থেকে দেশটিতে চলে আসা ধর্মীয়, পবিত্র, আধ্যাত্মিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করতে বাধ্য।’ বিচারক বলেন, ‘দণ্ডিত ব্যক্তির কর্মকাণ্ড প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’১৫ বছর আগে নিজের আশ্রমেরই দুই সাধিকাকে ধর্ষণের মামলায় সাজা শোনানোর আগে রাম রহিমকে তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) বিশেষ বিচারক জগদীপ সিং আরও বলেছেন— দোষী ব্যক্তি (গুরমিত রাম রহিম) একটা জঙ্গলি জানোয়ার। কারণ সে তার দুই পবিত্র সাধিকাকেও ছাড়েনি।

এখনো অনেকের ভক্তি তার ওপর অটুট : রাম রহিম আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে যখন সবাই তাকে ধিক্কার দিচ্ছে, তার মধ্যেও তার ভক্তদের অনেকেই এখনো ওই ‘গুরু’র প্রতি রয়েছে শ্রদ্ধা, আস্থা। এরকমই এক যুবক সোনু যাদব। ডেরার স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। ইংরেজিতেই কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।

তার বক্তব্য, বাবাজি প্রথম থেকেই ভালো শিক্ষা দিয়েছেন, সমাজের প্রতি নীতি-নৈতিকতা শিখিয়েছেন, মানুষের কোন পথে চিন্তাভাবনা করা উচিত, সেসব বলেছেন আমাদের। আমরা তাই উনাকে গুরু বলেই মানি। শুধু সোনু নয়, তার পরিবারের তিন পুরুষই গুরমিত রাম রহিমের ভক্ত। সোনু আরও বলছিলেন, ‘বাবাজি আমাকে তিনটে মন্ত্র শিখিয়েছেন, নেশা করবে না, মেয়েদের সম্মান করবে আর বড়দের শ্রদ্ধা করবে।

ঘটনাচক্রে যে মেয়েদের সম্মান করতে সোনুকে শিখিয়েছেন রাম রহিম সিং, অন্যদিকে দুই নারী সাধিকাকেই ধর্ষণ করেছেন বলে আদালতে প্রমাণ হয়েছে। সোনু আর তার পরিবার অবশ্য এখনো বিশ্বাস করেন না তাদের ‘গুরুজি’ ওই কাজ করে থাকতে পারেন।

সামনে আরও কঠোর সাজা হতে পারে : ধর্ষণ মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তবে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে অদূর ভবিষ্যতে আরও কঠোর সাজার ঘোষণা আসতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধি ধর্ষণ মামলার রায় পাওয়া গেলেও রাম রহিমের বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলার রায় দেওয়া বাকি রয়েছে। ওই মামলাগুলো হত্যাসংক্রান্ত। আর সে কারণে এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে রাম রহিম আরও কঠোর সাজার মুখোমুখি হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তার বিরুদ্ধে অন্য যে মামলাগুলো চলছে তার মধ্যে একটি হলো সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতির হত্যা মামলা। সিরসায় ‘পুরা সাচ’ নামে একটি স্থানীয় দৈনিক চালাতেন এই সাংবাদিক। ২০০২ সালের অক্টোবরে রাম রহিমের হাতে এক নারী শিষ্য ধর্ষণের শিকার হওয়া সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, রঞ্জিত সিং নামের এক ব্যক্তির হত্যা মামলাতেও অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে স্বঘোষিত ধর্মগুরুর দিকে। তিনিও ২০০২ সালে মারা যান। মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। এবিপি আনন্দ জানায়, দুই ক্ষেত্রেই, মামলার বিচারপ্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, ডেরা ম্যানেজার ফকিরচাঁদের অন্তর্ধান নিয়েও অভিযুক্ত হয়েছেন গুরমিত রাম রহিম। পুলিশ ও সিবিআই মনে করছে, বর্তমানে রাম রহিমের জেল হওয়ায় অন্য মামলায় বহু সাক্ষী এবার সামনে এসে সাক্ষ্য দেবেন।

কয়েদখানায়ও কাঁদছেন ধর্ষক গুরু : রাম রহিম কারাগারে প্রথম দিনটি কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া পোশাকের বদলে ঝলমলে কাপড় পরে কাটিয়েছেন। হরিয়ানার রোহতাকের কাছে সুনারিয়া কারাগারে ১৯৯৭ নম্বর কয়েদি হিসেবে সোমবার সন্ধ্যা থেকে ডেরা সাচ্চা সওদা আশ্রমের প্রধান সাজা ভোগ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

এর আগে শুক্রবার ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাম রহিমকে ওই কারাগারে নেওয়া হয়। তারপর থেকে তিনি অনবরত কাঁদছেন বলে জামিনে কারাগারটি থেকে বের হয়ে আসা এক ব্যক্তি এনডিটিভিকে জানিয়েছেন। ডেরা প্রধান কোনো শক্ত খাবার খাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি। ‘তিনি অল্প পরিমাণ পানি ও দুধ খাচ্ছেন, জেলের ভিতর কারও সঙ্গে কথাও বলছেন না’, বলেন তিনি। কারা কর্তৃপক্ষের পছন্দ অনুযায়ী একটি কক্ষ ডেরা প্রধানের জন্য বরাদ্দ করা হয়; নিরাপত্তার জন্য ওই কক্ষে অন্য কাউকে রাখা হচ্ছে না বলেও কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পুলিশের দুই সদস্য এবং দুই নিরাপত্তারক্ষী তাকে পাহারা দিচ্ছেন।

চলচ্চিত্র তারকা, ক্রিকেটার ও রাজনীতিকসহ দেশে ও দেশের বাইরে লাখো ভক্তের শ্রদ্ধার পাত্র রাম রহিম শুক্রবার ২০০ গাড়ির শোভাযাত্রা নিয়ে পাঁচকুলার আদালতে আসেন। পাঁচকুলার এই আদালতই ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে। শোভাযাত্রায় ২৫টিরও বেশি বিলাসী গাড়ি ছিল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ডেরার প্রধান এসেছিলেন বুলেটপ্রুফ এসইউভি-তে চড়ে। সেই দিন যখন তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তারপর তার ভক্তকুলের সংঘর্ষে অন্তত ৩৮ জন নিহত হন; আহতের সংখ্যা আড়াইশ ছাড়িয়ে যায়। এসডিডিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর