বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
হিউস্টনে আকস্মিক বন্যা-জলোচ্ছ্বাস

শত শত বাংলাদেশির বাড়ি ঘরে পানি

প্রতিদিন ডেস্ক

হারিকেন হার্ভের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাতে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টন সিটি ও তার আশপাশে কয়েকটি এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় প্লাবিত এলাকা থেকে রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ কয়েকশ বাংলাদেশিসহ দুই হাজার জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদেরকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র এবং শুকনো এলাকার চার্চে রাখা হয়েছে। খবর এনআরবি নিউজের। হিউস্টনে ২২ সহস াধিক বাংলাদেশি বসবাস করে। সেখানকার ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব হিউস্টন’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদ জুলফিকার খান রবিবার রাত ১২টায় এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘আমাদের বাড়িও পানিতে ভাসছে। হিউস্টনের পুরো পৌর এলাকা জুড়ে বন্যা সতর্কতা জারি করেছে ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস)। ‘১৯৮২ সাল থেকে আমি এই সিটিতে বসবাস করছি। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আর কখনো দেখিনি। ক্লিয়ার লেইক, লিগ সিটি, ডিকেনসন, ক্যাটি, সাইপ্রেস, সুগারল্যান্ড, সিলি, ফ্রেন্ডসউড প্রভৃতি এলাকার সব ভবনের নিচতলায় পানি উঠেছে। অনেকেই দোতলায় আশ্রয় নিয়েছেন।

সেখান থেকে কমপক্ষে ৫০০ পানিবন্দী বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।’ রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে যে, আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার মতো রাস্তাও নেই। কারণ সব রাস্তা এখন কয়েক ফুট পানির নিচে।

সেদিন সন্ধ্যা নাগাদ গত ৪৮ ঘণ্টায় টেক্সাসের হিউস্টন ও গালভেস্টনে ৩০ থেকে ৩২ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আসছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আরও ৩০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে জাতীয় আবহাওয়া দফতর। পূর্বাভাসে বলা হয়, ‘হিউস্টনে বন্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। টেক্সাসের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার অন্যান্য অঞ্চলেও বন্যা হওয়ার জোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে শুক্রবার রাতে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে আঘাত হানে হার্ভে।

হিউস্টন সিটি মেয়র সিলভেস্টার টারনার পুরো সিটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর জানিয়েছেন, ‘সবগুলো সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। যানবাহন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই নেহায়েত বিপদে না পড়লে কেউ যেন ৯১১ এ ফোন না করেন। নিচতলায় পানি ওঠা বাড়ি-ঘরের লোকজনকে ছাদে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন এই মেয়র।

মেক্সিকো সাগর সংলগ্ন কর্পাস ক্রিস্টি সিটির বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রহিম র‌্যা নিহাল জানান, ‘আমার একটি সুপার মার্কেটসহ বেশ কটি বাড়ির দেয়াল ভেঙে গেছে। হার্ভের তাণ্ডবে ক্ষত-বিক্ষত পুরো এলাকা। জনজীবন জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কাছে।’

যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক রহিম আরও বলেন, ‘হারিকেন হার্ভের গতি দুর্বল হলেও জলোচ্ছ্বাস এবং লাগাতার ঝড়ো হাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হিউস্টন সিটির ডাউন টাউন থেকে করপাস ক্রিস্টি পর্যন্ত সর্বত্র এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়েক হাজার বাংলাদেশিসহ দুই লক্ষাধিক মানুষ বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়েছেন ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে।’

‘দুর্যোগের কারণে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিউস্টন সিটির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ৫০টি কাউন্টিতেই জরুরি অবস্থা জারি করেছেন রাজ্য গভর্নর। গোটা এলাকার মানুষই গৃহবন্দী কিংবা পানিবন্দী। পানিতে ডুবে যাওয়ায় হিউস্টন সিটির দুটি এয়ারপোর্টও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে হিউস্টন হবি এবং জর্জ বুশ এয়ারপোর্ট। এর ফলে এ দুটি এয়ারপোর্টের উদ্দেশে বিভিন্ন দেশ থেকে ছেড়ে আসা ফ্লাইটের যাত্রীরা মধ্যপ্রাচ্যে আটকা পড়েছেন।

শুক্রবার রাত ১১টায় ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি টেক্সাস উপকূল অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্প এলাকায় তাণ্ডব চালায়। তবে ধীরে ধীরে শক্তিক্ষয় হয়ে এটি ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হয়।

ঝড় ও বন্যায় রবিবার রাত পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও দুজন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে অঙ্গরাজ্য প্রশাসন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। যদিও হাসপাতালগুলো আগেই খালি করা হয় ভয়ঙ্কর হারিকেনের আতঙ্কে। রেডক্রস তাদের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্রে গুরুতরভাবে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট জানিয়েছেন, ‘অঙ্গরাজ্যটির ক্ষতিগ্রস্তু এলাকাগুলোর আবর্জনা ও ধ্বংস স্তূপ পরিষ্কার করার জন্য তিনি সামরিক বাহিনীর এক হাজার ৮০০ সদস্যকে মোতায়েন করেছেন এবং আরও এক হাজার লোক তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত থাকবে।

টেক্সাসের দুর্যোগ কবলিত এলাকা পরিদর্শনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেখানে যাচ্ছেন মঙ্গলবার। হোয়াইট হাউস থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ যাবতীয় কাজে ফেডারেল প্রশাসন সহায়তা দেবে অঙ্গরাজ্য প্রশাসনকে—এ ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে পূর্বাহ্নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর