শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পূজামণ্ডপে রোহিঙ্গা হিন্দু

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা হিন্দুরা উখিয়ার ধুরুমখালী মন্দিরে গিয়ে দুর্গা পূজা করেছেন। এ ছাড়া তারা গতকাল উখিয়া সদর পূজামণ্ডপ ও মরিচ্যা বাজার পূজামণ্ডপে পূজা দিতে যান। গতকাল ছিল পূজার নবমী। জীবনে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার ভার এখনো তারা বইছেন। সেই শোক তাদের অনেকের এখনো কাটেনি। তারপরও ধর্মীয় আচার পালন না করলে অমঙ্গল হবে— এ ভয়ে পিছপা হননি। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা হিন্দু গত বৃহস্পতিবার অষ্টমীর দিন এবং গতকাল নবমীর দিন দলে দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন মণ্ডপে গেছেন।

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে ২৪ আগস্ট রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু হলে নির্যাতনের শিকার হন রোহিঙ্গা হিন্দুরাও। পালিয়ে আসা ৫১৮ জন হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশুর মধ্যে আটজনই বিধবা হয়েছেন ওই ঘটনায়। নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা হিন্দু উখিয়ার হলদিয়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য স্বপন শর্মার বদান্যতায় তারা হলদিয়া হিন্দুপাড়ার একটি পরিত্যক্ত মুরগির ফার্মে আশ্রয় পান। সদ্য বিধবা আট নারী আশ্রয় পেয়েছেন পাড়ার কয়েকটি পরিবারে। আশ্রিত এই হিন্দুরা পালিয়ে আসার এক মাস পার হলেও কোথাও বের হননি।

গত বৃহস্পতিবার তারা মণ্ডপে যাওয়া শুরু করেন মা দুর্গাকে পূজা দিতে। পূজাকে কেন্দ্র করে গতকাল অনেক নারী উপবাস ব্রতও পালন করেন বলে জানা গেছে। ইউপি সদস্য স্বপন শর্মা জানান, মিয়ানমারের হিন্দুরা যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে কোনো পূজামণ্ডপ নেই। তারা এর আগেও পূজা দিতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে যেতে দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকালে গাড়িতে করে প্রথমে হিন্দু মহিলাদের পূজামণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয় কয়েকজন পুরুষকে। মা দুর্গার কৃপা ও সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে গতকাল উপোস দিয়েছিলেন কুমিলা শীল, ববিতা শীল, বিজয়বালা শীল, দুধছানা পালসহ বেশ কয়েকজন। তারা জানান, মা দুর্গা বছরে একবারই এই ইহধামে আসেন। তাকে পূজা না দিলে নিজেদের আরও অমঙ্গল হবে। তাই পূজার শুরু থেকে আমরা কাছের কোনো একটি মণ্ডপে যেতে চেয়েছিলাম, বারণ থাকায় যেতে পারিনি। এদিকে মিয়ানমারের বলীবাজার থেকে পালিয়ে আসা সুরধন পাল জানান, এখানে যে অবস্থায় রয়েছি তাতে ধর্মকর্ম করা খুব কঠিন। পূজা-অর্চনা তো করতে পারছি না। সে মানসিকতাও নেই। মিয়ানমারে একজন গুরুর দীক্ষাও নিয়েছিলাম, তাও এখন পালন করতে পারছি না।

সর্বশেষ খবর