বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিসিকের তিন গাড়ি গায়েব রহস্য

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) তিনটি গাড়ি রীতিমতো গায়েব হয়ে গেছে। গাড়িগুলো চুরি হয়েছে নাকি সিসিকের সংশ্লিষ্ট কেউ সরিয়ে নিয়েছেন, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। এর চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গাড়ি তিনটি গায়েব হওয়ার প্রায় এক মাস পর থানায় জিডি করা হয়েছে! সিসিক মেয়রের দাবি, অকেজো গাড়িগুলো ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ থেকে যথাস্থানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে জিডি দায়েরকারী সিসিকের উপসহকারী প্রকৌশলী বলছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। পুলিশও বলছে, গাড়িগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরস্পরবিরোধী এমন বক্তব্য নিয়ে চলছে তোলপাড়। জানা যায়, নতুন ভবন নির্মাণ কাজের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন নগরীর তোপখানায় পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারে নিজেদের অস্থায়ী কার্যক্রম চালায়। এই অস্থায়ী কার্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের কোনায় সিসিকের তিনটি গাড়ি রাখা ছিল। এ গাড়ি তিনটির নম্বর হচ্ছে—সিলেট ব-৬১৪৮, সিলেট ট-৫৪১০ ও সিলেট ঘ-০২-০০৪৮। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে গাড়িগুলোর কোনো হদিস মিলছে না। অথচ থানায় জিডি (নম্বর-১৯৪৯) করা হয়েছে ২৪ অক্টোবর। সিসিকের উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জাবেরুল ইসলাম এই জিডি করেছেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘২৭ সেপ্টেম্বর সকালে অফিসে তিনটি অকেজো গাড়ি যথাস্থানে দেখতে পাইনি। খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে থানায় জিডি করছি।

 মেয়র মহোদয়ের সাথে আলাপ করে উপরিউক্ত বিষয়ে আপাতত মামলা না করে সরকারি সম্পদ চুরির দায়ে ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরি করছি।’

সিসিকের গাড়ি তিনটি গায়েব হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর, অথচ এক মাস পর কেন জিডি করা হলো—এমন প্রশ্নে উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জাবেরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গাড়ি খুঁজতে সময় লেগেছে। এ জন্য জিডি দায়েরে বিলম্ব হয়েছে।’ দীর্ঘ এক মাসে গাড়িগুলোর সন্ধান না পেয়েও এ ব্যাপারে থানায় কেন চুরির মামলা করা হয়নি, এমন প্রশ্নে জাবেরুল বলেন, ‘গাড়িগুলো পাওয়া গেলে চুরির মামলা করা হবে।’ জাবেরুলের এই ‘গাড়ি পাওয়ার পর চুরির মামলা’ তরিকা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি জাবেরুল জানেন, গাড়িগুলো কোথায় আছে? তিনি কি গোপনে গাড়িগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন? প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান যখন মেয়র ছিলেন, তখনো এই জাবেরুলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তাকে কয়েক দফায় শোকজও করা হয়েছিল। এদিকে গাড়ি তিনটি নিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য ধূম্রজাল তৈরি করেছে। তিনি বলছেন, গাড়িগুলো যথাস্থানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মেয়র আরিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নতুন কয়েকটি গাড়ি পেয়েছে। এসব গাড়ি রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় পুরনো অকেজো গাড়িগুলো সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। তবে সিসিক কর্মীরা ওই গাড়ি তিনটি বর্জ্য ফেলার স্থানে নিয়ে ফেলে দেন। বিষয়টি আমি জানতে পেরে গাড়িগুলো ফিরিয়ে আনতে তাদের নির্দেশ দিই। পরে গাড়িগুলো যথাস্থানে নিয়ে আসা হয়।’ তবে মেয়রের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জাবেরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গাড়ি তিনটি যথাস্থানে থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ সিলেট মহানগরীর কোতোয়ালি থানায় গাড়ি তিনটি গায়েব হওয়ার বিষয়ে জিডি করা হয়। ওই থানার ওসি গৌছুল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গাড়িগুলোর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর