শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নাফ নদ সাঁতরিয়ে এলো ১৯ রোহিঙ্গা

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

নাফ নদ সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা যুবক বুসিডং এলাকার বাসিন্দা আবু সৈয়দ। বয়স ২৫ বছর। শাহপরীর দ্বীপ জেটির উপরেই গতকাল কথা হয় তার সঙ্গে। সদ্য সাঁতরিয়ে আসা এই যুবক জানালেন ওপারের নির্মমতার কাহিনী। তিনি বলেন, আমরা ধাওনখালী সীমান্তের চরে এসে অপেক্ষা করেছি এগারো দিন। সেখানে তাঁবু করে নৌকার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। খাবার যা ছিল তাও ফুরিয়ে গেছে, ছোট বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমাদের চোখের সামনে চরে অপেক্ষমাণদের দুই তিন জন করে শিশু প্রতিদিন মারা গেছে। কিন্তু এ সাতদিনে আমরা কোনো নৌকা পাচ্ছিলাম না বাংলাদেশে ঢুকতে। প্রতিরাতে দুই একটা নৌকা ধাওনখালী সীমান্তে গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে না পারায় নৌকায় ওঠা হয়নি আমাদের। সেনারা এসে আমাদের কাছে মিয়ানমার মুদ্রা যা ছিল তাও ছিনিয়ে নিয়েছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের মায়েরা অনুরোধ করেছে সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে, তাদের জন্য কোনো উপায় খুঁজে বের করা যায় কিনা। গতকাল বিকালে নাফ নদ সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন আবু সৈয়দসহ ১৯ রোহিঙ্গা যুবক। এরা সবাই সাড়ে তিন ঘণ্টা খালি জারিকেন বুকে নিয়ে নাফ নদ সাঁতরিয়ে বিকাল সাড়ে ৪ টায় শাহপরীর দ্বীপ জেটির কাছাকাছি আসেন। এ সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র শাহপরীর দ্বীপ বিওপির কোম্পানি কমান্ডার আবদুল জলিলের নেতৃত্বে বিজিবি জোয়ানরা সাঁতরিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে।

 

নাফ নদের লোনা জল সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে আসা ১৯ রোহিঙ্গা হলেন, রাসিডং এলাকার আবদুল মোনাফ (৩০), ছাবের আহমদ (১৪), বুসিডং এলাকার আনোয়ার খালেদ (১৯), জাহেদ উল্লাহ (২২), মোহাম্মদ ইয়াছিন (১৫), রহমত উল্লাহ (১৭), আজিজুর রহমান (১৮), মো. আয়াজ (১৬), আবু সৈয়দ (২৪), মো. নূর  (১৮), কবির আহমদ (২১), সিরাজুল ইসলাম (৩২), নূর কবির (২৪),  পুইম আলী এলাকার  মো. আয়ুব (২৬), নজির আহমদ (২০), আবদুল আজিজ (২২), জহির আহমদ (২২), মংডু কাইন্দা পাড়ার মো. নূর (১৯), মংডু শহরের ফরিদ আলম (১৭)।

সাঁতরিয়ে আসা ওই যুবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইনের বুসিডং এলাকার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার সেদেশের সেনা ও মগদের নির্যাতনে প্রাণ রক্ষার্থে বাংলাদেশ পালিয়ে আসার লক্ষ্যে ওপারের ধাওনখালী সীমান্তে জড়ো হয়। সেখানে তারা কেউ একমাস, কেউ দশ থেকে পনেরো দিন অপেক্ষার পরও এপারে ভিড়তে কোনো নৌকা না পাওয়ায় আটকা পড়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

ওই রোহিঙ্গা যুবকরা আরও জানান, রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন তাদের পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগটুকুও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই ওপারে স্বজনদের রেখে তাদের করুণ দশার চিত্র বিশ্ববাসীর নজর কাড়াতে তারা সাঁতার কেটে বাংলাদেশ এসেছেন। তবে ওপার সীমান্তে অপেক্ষমাণ তাদের স্বজনদের কী পরিণতি ভোগ করতে হবে তা তারা জানেন না।

উল্লেখ্য, এর আগেও গত চার দফায় নাফ নদ সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ২৩ রোহিঙ্গা যুবক। প্রথমবার গত ১১ অক্টোবর ১১ জন এবং শেষ তিন বারে চার জন করে ১২ জন। সর্বশেষ গতকাল একযোগে আসে ১৯ রোহিঙ্গা যুবক। এ নিয়ে পাঁচ দফায় নাফ সাঁতরিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে ঢুকেছে ৪২ জন রোহিঙ্গা।

সর্বশেষ খবর