ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে সতর্ক করে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল সন্ধ্যার পর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে অনির্ধারিত বৈঠকে মহানগরের এই দুই নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ সময় তাদের সতর্ক করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তোমাদের গ্রুপিংয়ে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দলীয় কর্মসূচিতে ময়লা ফেলে বাধাগ্রস্ত করা, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা নগ্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। এই বিভক্তির সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল শক্তির মহড়া দেখানোর চেষ্টা করবে। দক্ষিণের বিভক্তি আর উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বিএনপি। কারও ব্যক্তিগত রেষারেষি থাকলে দলের স্বার্থে সেগুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে। নিজেরা মীমাংসা করতে না পারলে প্রয়োজনে দলীয় সভানেত্রীর শরণাপন্ন হতে হবে। কিন্তু বিভেদ জিইয়ে রেখে আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এটা বরদাস্ত করা হবে না। মনে রাখতে হবে, আগে দল পরে ব্যক্তি।’ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুই নেতাকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচি চলাকালে ময়লা ফেলে অনুষ্ঠান পণ্ড করার চেষ্টা ভালো কাজ নয়। যারাই এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এ সময় কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে মেয়রকে নির্দেশ দেন কাদের। মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘বিষয়টি কে ঘটিয়েছে, তা আমি এখনো পরিষ্কার নয়। যেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুন না কেন, প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ কয়েকজন কাউন্সিলরকে দায়ী করেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে আমি প্রধান অতিথি ছিলাম। ময়লা ফেলার কারণে অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। ময়লার ঘটনায় যে কাউন্সিলরই জড়িত থাকুক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ঘটনা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।’
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, মেয়র সাঈদ খোকন নগরের সাধারণ সম্পাদক মুরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, মহানগরের থানা-ওয়ার্ড কমিটিতে কাউন্সিলরদের রাখা হয়নি। বিশেষ অঞ্চলের ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এই কমিটি দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। জবাবে মুরাদ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা কমিটিতে আছেন। আবার কাউকে কাউকে রাখা হয়নি, কারণ সে সময় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এমন একটি সিদ্ধান্ত ছিল যে, কাউন্সিলর হিসেবে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাদের শীর্ষ পদে রাখা হবে না। মুরাদ আরও বলেন, যারা ওয়ার্ডের নেতা ছিলেন, তারা থানায় স্থান পেয়েছেন। আর যারা থানায় ছিলেন তাদের মহানগরে স্থান দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে নেত্রী যখন যে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা সেটাই পালন করেছি। এই কমিটি দিয়েই বিগত সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়রকে বিজয়ী করেছি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মহানগরের এই দুই নেতাই বলেন, তাদের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই। বিগত সিটি নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কথাও উল্লেখ করেন তারা। এ সময় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী মঙ্গলবার আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সফল করার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি সাঈদ খোকন ও শাহে আলম মুরাদকে হ্যান্ডশেক করে মিলিয়ে যেতে বলেন। তারা হাত মিলিয়ে বলেন, আগামীতে দলের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করব। আমাদের কোনো বিরোধ নেই। এ সময় আগামী মঙ্গলবারের মেয়র হানিফের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য শাহে আলম মুরাদকে দাওয়াত দেন সাঈদ খোকন। একই সঙ্গে ফোনে দাওয়াত দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসানাতকে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আর কোনো বিভেদ নয়, সামনে নির্বাচন আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর আগামী মঙ্গলবার থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের যে বিভেদের চিত্র ফুটে উঠেছে তা নিরসন হয়ে সৌহার্দ্যের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।এর আগে দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শাহে আলম মুরাদকে নিয়ে বৈঠক করেন।