সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডিআরইউ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ২৯ সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, গণমাধ্যম দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। রাজনীতিকরা কখনো কখনো আপস করতে পারেন, কিন্তু গণমাধ্যম তা পারে না। এ কারণেই শুধু জঙ্গি ধ্বংস করলেই হবে না, জঙ্গি উৎপাদনকারী কারখানা ও ঘাঁটি বিএনপি ও খালেদা জিয়াকেও দমন-বর্জনের কোনো বিকল্প নেই। জঙ্গি ও রাজাকারের বন্ধু খালেদা জিয়াকে সেভাবেই গণমাধ্যমে তুলে ধরা উচিত। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড, ২০১৭ প্রদান অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে এবং অর্থ সম্পাদক মানিক মুনতাসিরের পরিচলনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সাবেক সিনিয়র সাংবাদিক ও জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহজাহান সরদার, সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জিলানী মিল্টন। অনুষ্ঠানে প্রিন্ট সাংবাদিকতায় ১৫ ক্যাটাগরিতে ১৬ জন, টেলিভিশন সাংবাদিকতায় আটজন, অনলাইন সাংবাদিকতায় তিনজন ও রেডিও সাংবাদিকতায় একজনসহ মোট ২৭টি ক্যাটাগরিতে ২৯ জন সংবাদিকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী। হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এ মুহূর্তে সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করছি। মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদীরা ঘোষণা দিয়েই যুদ্ধ শুরু করেছে, যেমন ঘোষণা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া দেশের ওপর ৯৩ দিনের আগুনযুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলেন। আর এ কথাও সত্য যে, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধেই দেশের গণমাধ্যম সব সময় সাহসী বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে।

একাত্তরে অত্যাচারী পাকিস্তানি, পরবর্তী সময়ে সামরিক হস্তক্ষেপ এবং সাম্প্রতিককালে  যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কলমযোদ্ধারা আপসহীন ভূমিকা নিয়েছেন, কোনো মাঝামাঝি অবস্থান নেননি। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও ইদানীংকালের জঙ্গিতাণ্ডব ও আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও গণমাধ্যম শতভাগ বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছে। তাদের এ ভূমিকার জন্য দেশ ও গণতন্ত্র উপকৃত হয়েছে, রক্ষা পেয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখনো জঙ্গি উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন হচ্ছে। পাঁচ বছর পর পর নতুন বিতর্ক তুলে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা হচ্ছে। পঁচাত্তরের পর থেকে রাজাকার আমদানি ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় অদল-বদল ও ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে। অস্বাভাবিক সরকারের নামে ভূতের সরকার প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত করা হচ্ছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন ও বাঁচানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আগুনসন্ত্রাস করা হচ্ছে। এসব ঘটনার জন্য দায়ী জেনারেল জিয়া এবং পরে বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, এক কথায় বলতে গেলে, জঙ্গি, রাজাকার ও আগুনসন্ত্রাসীদের যে নাটক এখন মঞ্চস্থ হচ্ছে, এর প্রযোজক হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া, পরিচালক জামায়াত এবং কর্মীরা আগুনসন্ত্রাসী ও রাজাকার। দেখা যাচ্ছে, জঙ্গি, আগুনসন্ত্রাসী, রাজাকারদের দমন ও বর্জনে সবাই একমত। জামায়াতের বিরুদ্ধেও আইনগত অবস্থান তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রযোজক বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার বিষয়ে গণমাধ্যম ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রে এক ধরনের দোদুল্যমানতা ও নীরবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সত্য হচ্ছে এই যে, প্রযোজক যতক্ষণ সক্রিয় রয়েছে, পরিচালক ও কর্মীদের যতই ধ্বংস করা হোক না কেন, জঙ্গি উৎপাদন, আমদানি ও তাণ্ডব চলতেই থাকবে। সুতরাং মূল হোতার বিরুদ্ধে গণমাধ্যম সোচ্চার হবে, এটিই জাতি আশা করে। একই সঙ্গে তাদের রাজনীতি ও ক্ষমতার বাইরেই রাখা উচিত।

ইনু বলেন, অতীতের মুসলিম লীগের মতোই সামরিকতন্ত্রের ঔরসজাত বিএনপি গণতন্ত্রের দল নয়, রাজনীতির একটি বিষফোঁড়া। নির্বাচন নয়, বিএনপির বিষয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও রাজাকারদের পুনর্বাসন করা, নির্বাচনের নামে রাজাকারদের রাজনীতিতে হালাল করা। কিন্তু নির্বাচন কখনোই রাজাকার-জঙ্গি-যুদ্ধাপরাধীদের হালাল করার কোনো প্রক্রিয়া হতে পারে না।

তিনি বলেন, গণমাধ্যম দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। রাজনীতিকরা কখনো কখনো আপস করতে পারেন, কিন্তু গণমাধ্যম তা পারে না। এ কারণেই শুধু জঙ্গি ধ্বংস করলেই হবে না, জঙ্গি উৎপাদনকারী কারখানা ও ঘাঁটি বিএনপি ও খালেদা জিয়াকেও দমন-বর্জনের কোনো বিকল্প নেই। জঙ্গি ও রাজাকারের বন্ধু খালেদা জিয়াকে সেভাবেই গণমাধ্যমে তুলে ধরা উচিত। আর এভাবেই গণমাধ্যম বাংলাদেশকে বাংলাদেশের পথে স্থায়ীভাবে পরিচালনায় শ্রেষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।

ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০১৭-তে সংবাদপত্রে শিক্ষাবিষয়ক ক্যাটাগরিতে বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন নয়াদিগন্তের মেহেদী হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক রিপোর্টিংয়ে ডেইলি স্টারের মাসুম আলী মোল্লা, অর্থনীতিবিষয়ক রিপোর্টিংয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের ইব্রাহিম হুসাইন, নগর সমস্যা ও সম্ভাবনায় ডেইলি স্টারের হেলেমুল আলম, অপরাধবিষয়ক রিপোর্টিংয়ে প্রথম আলোর রোজিনা ইসলাম, সংসদ ও নির্বাচন কমিশন রিপোর্টিংয়ে কালের কণ্ঠের কাজী হাফিজ, বিদ্যুৎ জ্বালানিতে ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের আজিজুর রহমান রিপন পুরস্কার পান।

এ ছাড়া বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে যৌথভাবে ডেইলি স্টারের সাখাওয়াত লিটন ও ইনাম আহমেদ, ক্রীড়া রিপোর্টিংয়ে প্রথম আলোর মাসুদ আলম, স্বাস্থ্যবিষয়ক রিপোর্টিংয়ে ডেইলি স্টারের কলিমুল পালমা, রাজনীতিবিষয়ক রিপোর্টিংয়ে সমকালের আবু সালেহ রনি, কৃষি ও পানিতে জনকণ্ঠের কাওসার রহমান, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মানবকণ্ঠের এম মামুন হোসেন, ব্যাংকিং ও অর্থনীতিতে ভোরের কাগজের মরিয়ম সেঁজুতি, নারী-শিশুতে যৌথভাবে যুগান্তরের শিপন হাবিব ও সমকালের সাজিদা ইসলাম পারুল পেয়েছেন অ্যাওয়ার্ড।

টেলিভিশন বিভাগে অর্থনীতি ক্যাটাগরিতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ফারুক আহমেদ মেহেদী, নগরীর সমস্যা ও সম্ভাবনায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বদরুদ্দোজা বাবু, অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলায় ৭১ টেলিভিশনের পারভেজ নাদির রেজা, তথ্য ও যোগাযোগে এনটিভির এম এম ইসলাম মইদুল, ক্রীড়ায় এস এ টিভির শফিকুল ইসলাম শিপলু, সুশাসন ও দুর্নীতিতে ইনডিপেনডেন্টের মাহবুবুল আলম লাবলু, নারী, শিশু ও মানবাধিকারে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মাসউদুর রহমান, স্বাস্থ্যে এনটিভির হাসান জাবেদ। অনলাইন বিভাগে নারী, শিশু ও মানবাধিকার ক্যাটাগরিতে বাংলানিউজের সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, উন্নয়ন ও সম্ভাবনায় রাইজিংবিডির রফিকুল ইসলাম মিন্টু ও অনলাইন বিভাগে তথ্য,  যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছেন জাগো নিউজের সাঈদ শিপন ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিবিসির আহরার হোসেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর