শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়াজ তুললে বর্ণাশ্রম প্রথা দূর হবেই’

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস বলেছেন, শূদ্রদের সংঘবদ্ধ হওয়ার মূলমন্ত্র নিহিত রয়েছে শিক্ষায়। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়াজ তুললে সমাজ থেকে শ্রেণি শোষণ ও বর্ণাশ্রম প্রথা অবশ্যই দূর হবে। গতকাল বিকালে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বর্ণাশ্রম প্রথা : শ্রেণি শোষণেরই অপর নাম’ শীর্ষক কানিজ ফাতেমা মোহসিনা দ্বিতীয় স্মারক বক্তৃতা করছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজক সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্মারক বক্তৃতায় হরিশংকর জলদাস বলেন, খ্রিস্টপূর্ব প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আর্য জাতি ভারতে আসে। তাদের ছিল উন্নত ভাষা, নিয়মে বাঁধা সমাজ, সুসংস্কৃত ধর্মব্যবস্থা। ভারতে আগমনের অনেককাল পর আর্যরা বাংলায় প্রবেশ করে। আগে থেকে বাংলায় ব্রাহ্মণ্য ধর্মের উপস্থিতি থাকলেও তার প্রভাব ছিল অতি সামান্য। গুপ্তযুগ, পাল শাসন পেরিয়ে বাংলায় শুরু হয় সেন-রাজত্ব। সেনদের আমলেই বাংলায় বর্ণাশ্রম প্রথা প্রবল হয়। ১০৯৮ থেকে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলায় জাতিভেদ তথা বর্ণাশ্রম প্রথা উৎকট আকার ধারণ করে।

তিনি বলেন, সেন রাজারা ছিলেন ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক। এ দেশে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যথেষ্ট প্রয়াসী ছিলেন। আর সেন আমলেই পূজা-পার্বণ-যাগ্যজ্ঞের বহুল প্রচলন দেখা দেয়। রাজার আনুকূল্য পেয়ে ব্রাহ্মণরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন।

হরিশংকর জলদাস বলেন, আচারসর্বস্ব হিন্দু ধর্মের অনুশাসনের জাঁতাকলে জব্দ হয়ে শূদ্র শ্রেণির মানুষেরা হয়ে গেল মন্ত্রহীন ও ব্রাত্য। অথচ ব্রতে নিষ্ঠাবান যারা তারাই ব্রাত্য। অথর্ববেদে বলা আছে- ‘ব্রাত্য পুরুষ মহানুভব’। প্রকৃতপক্ষে শূদ্রদের দাস বানিয়ে রাখার জন্য শিক্ষা-দীক্ষা থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে বর্ণবাদীরা। দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে শূদ্রদের মুক্ত করার জন্য সমাজপতিরা কোনোরূপ ইতিবাচক পদক্ষেপ নেননি।

তিনি বলেন, অধিকারবিহীন পশুজীবনের চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয়। মৃত্যুকে মেনে নেয় যারা তারা দুর্বল। শূদ্ররা দুর্বল নয়। তাদের দেহে বেঁচে থাকার আকুল স্পৃহা। যথাযথ মানুষের মতো বেঁচে থাকার জন্য শূদ্রদের আজ সংঘবদ্ধ হতে হবে। সংঘবদ্ধ হওয়ার মূলমন্ত্র আছে শিক্ষা। শিক্ষিত হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে শূদ্ররা যদি আওয়াজ তোলে তাহলে এই শ্রেণিবিভেদময় সমাজ থেকে শ্রেণি শোষণ, বর্ণশ্রম প্রথা অবশ্যই দূরীভূত হবে এবং তাতেই ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বদলে যাবে।

সভাপতির ভাষণে সমাজ-রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যে কর্মশক্তি আর লোকবল দরকার সেটা এখনো আমরা তৈরি করতে পারিনি। এই কেন্দ্র থেকে আমরা গুণীদের স্মারক বক্তৃতার আয়োজন ও তাদের জীবনী নিয়ে কাজ করি। ভবিষ্যতে মওলানা ভাসানীসহ অন্যান্য গুণীদের নিয়েও স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হবে।

সর্বশেষ খবর