বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
নেপাল ট্রাজেডি

সব রহস্য ব্ল্যাকবক্সে

জুলকার নাইন, কাঠমান্ডু থেকে ফিরে

১২ মার্চ দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরের আকাশসীমায় পৌঁছান অভিজ্ঞ পাইলট আবিদ সুলতান। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আকাশে ঘোরাঘুরি শেষে দুপুর ২টা ২২ মিনিটে অবতরণের অনুমতি পান তিনি। এরপর ২টা ২৮ মিনিটে উভয় রানওয়েতে নামার অনুমতি পান। চার মিনিট পর ২টা ৩২ মিনিটে হঠাৎ জানতে চান রানওয়ে কি ক্লিয়ার আছে? আঁতকে ওঠা আবিদের ল্যান্ডিং গিয়ার মাটি ছুঁয়ে আবার উঠে যাওয়ার চেষ্টা করে। রানওয়ের দেয়াল ভেঙে এয়ারক্রাফট নিয়ে চলে যান খেলার মাঠে। ২টা ৩২ মিনিটে মিনিটের ঘটনাপ্রবাহে চলে যায় ৫১ প্রাণ। ২০১৫ সালে আবিদ নিজে কানাডায় গিয়ে ইউএস-বাংলার টাকায় যে এয়ারক্রাফটটি দরদাম করে কিনে নিয়ে এসেছিলেন তা তার নিজের হাতেই ধ্বংস হয়। শিক্ষাগুরু আবিদের পাশের সিটে বসে প্রাণ হারান তার শিষ্য ইউএস-বাংলার কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ। স্নায়ুবিক শক্তির অধিকারী আবিদ সুলতান ককপিটে বসেই অনুভব করেন বিমানের বিস্ফোরণ। এক সময়ের যুদ্ধবিমান চালানো আবিদের জীবনীশক্তি এতটাই ছিল যে, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমানও তার প্রাণ কেড়ে নিতে পারেনি। দুর্ঘটনার ৮ দিন পর এখনো অজানা যে হঠাৎ কী দেখে আঁতকে উঠেছিলেন আবিদ! প্রশ্ন আছে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরের একটি ত্রিভুবনে আবিদ কেন ডানদিক থেকে নামছিলেন। শতবার সফলভাবে ত্রিভুবনে ল্যান্ডিং করা আবিদ সেখানকার আকাশে অপেক্ষা করার বিষয়ে ভালোভাবেই জানতেন। তিনি যে অধৈর্য ছিলেন না তাও বোঝা যায় তার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে তার কথোপকথনে। তাহলে কী পরিস্থিতিতে এমন বিপজ্জনক ল্যান্ডিংয়ে বাধ্য হলেন আবিদ, সে উত্তর দেওয়ার জন্য আবিদ আর ইহকালে নেই। দুর্ঘটনার পরদিন প্রাণ হারানো আবিদ এখন শুয়ে আছেন বনানীর কবরে। এখনো অমীমাংসিত এসব প্রশ্নের উত্তর একমাত্র দিতে পারে বিমানটির ব্ল্যাকবক্স। আবিদ যেদিন মারা যান, সেদিনই উদ্ধার হওয়া ব্ল্যাকবক্স এখন সযত্নে রাখা আছে কাঠমান্ডুতে। দু-একদিনের মধ্যে ব্ল্যাকবক্স কানাডা না সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে নেপালের তদন্ত কমিটি। জানা যায়, চলমান তদন্তের প্রধান দুটি সূত্র- ব্ল্যাকবক্স এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)। ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত ফ্লাইটের ধ্বংসাবশেষ থেকে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রই উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার আগের সব কথোপকথন বা যান্ত্রিক গোলমালের সব তথ্য জমা থাকে এ দুটিতে। প্রধানত এ দুটি যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকে বিমান দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করা হয়।

ব্ল্যাকবক্স থেকে তথ্য বের করার সক্ষমতা অধিকাংশ দেশের এখনো নেই। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাউ) সহায়তা নিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল সংস্থা-এফএএ এসব ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। তবে নেপাল কানাডা বা সিঙ্গাপুরের যেখানেই এ দুটি যন্ত্র পাঠাক সেক্ষেত্রেও পরিপূর্ণ তথ্য পেতে কমপক্ষে এক মাস সময়ের প্রয়োজন হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর