বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমাদের ভোট হয় একচেটিয়াভাবে

— অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, আমরা অনিশ্চিত এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আমরা জানি না আমাদের করণীয় কী। রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাস করলে রাজনীতি থাকে। আর রাজনীতি থাকলে ভোট হয়। কিন্তু আমাদের এখানে ভোট হয় একচেটিয়াভাবে। দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য ভোট দেয়। কিন্তু যখন পরিবর্তন হয় না তখন মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নাজমুল করিম স্টাডি সেন্টার আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক নেহাল করিম।

এতে ‘অনিশ্চিত পথে বাংলাদেশের রাজনীতি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জাতিরাষ্ট্র কথাটা সঠিক নয়। রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক। এমন একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার ছিল যেখানে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা থাকবে। এগুলো সংবিধানে থাকলেও বাস্তবে নেই।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ তার প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশে দ্বিদলীয় রাজনীতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দেশ দুটি রাজনৈতিক পরাশক্তির থাবার নিচে চলে গেছে। বিদ্যমান এই মেরুকরণ নাগরিকদের জন্য স্বস্তিকর নয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে তৈরি হচ্ছে নানান জল্পনা ও অনিশ্চয়তার ধূম্রজাল। ব্যাকরণ মেনে বাংলাদেশের রাজনীতি হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া খুবই কঠিন এবং বিপজ্জনকও।

এ সময় তিনি বলেন, বড় দুই দলের দ্বৈরথ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগ রয়েছে চালকের আসনে আর এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নানা কারণেই বিপর্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশে সব দল নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা পেন্ডুলামের কাঁটার মতো দুলছে।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ তারা সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ দৃশ্যমান হলেও সমাজে অস্থিরতা বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন দুর্বল হয়ে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কর্তৃত্ববাদী শাসন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নাগরিকরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিকল্পের সন্ধান করতে পারে। তবে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারা যে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি ভালো হবে, সুশাসন নিশ্চিত করবে তাদের অতীত রেকর্ড দেখে তা মনে হয় না।

তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ভোটের ফলাফল যা-ই হোক না কেন আমাদের তা মিনে নিতে হবে। টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনমনে যে ক্ষোভ জন্মেছে ক্ষমতার বাইরে গিয়ে তার মুখোমুখি হতে আওয়ামী লীগ স্বচ্ছন্দবোধ করবে না। আর যদি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে পরাজয়ের সম্ভাবনা থেকেই যাবে। এমন একটি অবস্থায় যেখানে দুই দলই জিততে চায় এবং পরাজয় মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা নেই সেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের যেমন সম্ভাবনা আছে তেমনি আছে আবারও সহিংস রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে পড়ে যাওয়ার। এ রকম একটি অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা অনিশ্চয়তার অন্ধকারে হারিয়ে যেতে পারে। সামনের দিনগুলো সহজ হবে না।

সর্বশেষ খবর