ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ বা ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনা কী হবে— এ নিয়ে এখনই ভাবনা শুরু হয়েছে। ইইউর কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনেও এসব আলোচনা উঠে এসেছে। ফলে এবারের কমনওয়েলথ সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে।
কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের সেশন শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জানান, এবারের সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ২৮টি। সেখানে কমনওয়েলথের সদস্যরাষ্ট্র ৫৩টি। এখানে ২৪০ কোটি মানুষের বাস। ফলে সদস্যরাষ্ট্রগুলো মনে করছে, এখন বৈশ্বিক বাণিজ্য, নিরাপত্তা, ব্লু-ইকোনমি, গণতন্ত্র, সুশাসন ও সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এখন এই জোট আরও কার্যকর ও শক্তিশালী রাখার সক্ষমতা অর্জন করবে।
তাই যুক্তরাজ্যের কাছে বিকল্প হিসেবে কমনওয়েলথ এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, ইইউ থেকে বেরিয়ে এলেও সম্পর্ক রাখবে যুক্তরাজ্য। তারা বলছেন, বাণিজ্য, যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ইইউর দেশগুলোয় বসবাস এর বড় কারণ। প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক গার্ডিয়ান যুক্তরাজ্য সরকার কর্তৃক ইইউ নাগরিকদের প্রবেশাধিকার ঠেকানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় রেখে যারা ব্রেক্সিটের পক্ষে কথা বলেছেন, এখন তারাও এই গোপন পরিকল্পনায় আস্থা রাখতে পারছেন না। এই বিষয় নিয়ে যুক্তরাজ্যে সংসদ অধিবেশনেও তুমুল বিতর্ক হয়েছে। তবে অভিবাসনবিরোধী ও ব্রেক্সিটপন্থি রাজনীতিকরা সরকারের কঠোর নীতির পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। যুক্তরাজ্য তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের মার্চে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়া মাত্রই ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করবে। বিশেষ করে অদক্ষ শ্রমিকদের প্রবেশ ঠেকিয়ে ব্রিটিশদের কাজের সুযোগ বাড়ানো হবে। অদক্ষ কর্মীদের কর্ম ভিসা দেওয়া হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের। আর দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসার মেয়াদ হবে তিন থেকে পাঁচ বছর। তাদের যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ সীমিত করতেই এই ব্যবস্থা। ইউরোপের অনেক দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের লক্ষ্য থাকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের। কিন্তু এ অবস্থায় এখন আর তা সম্ভব হবে না। পরিকল্পনায় আরও বলা হয়, ইইউ নাগরিকদের পরিবার আনার ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো সীমারেখা নেই, যে কাউকে তারা পরিবারের সদস্য ঘোষণা করে আনতে পারেন।তবে পরিবারের সদস্যের একটা সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ব্রেক্সিটের পর পরিবারের সদস্যকে (স্বামী, স্ত্রী বা সন্তান) যুক্তরাজ্যে আনতে হলে ইইউ নাগরিকদের বছরে ১৮ হাজার ৬০০ পাউন্ড আয় দেখাতে হবে। বর্তমানে পরিবার আনতে ব্রিটিশ নাগরিকদের ওই পরিমাণ আয় দেখাতে হলেও ইইউ নাগরিকদের তা করতে হচ্ছে না। ব্রেক্সিট-পরবর্তী ইউরোপে অভিবাসী বাংলাদেশিদের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন জার্মানিপ্রবাসী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এস এম লুত্ফর রহমান। তিনি জানান, ‘ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন, ডেনমার্ক থেকে অনেকেই নিরাপদ জীবনযাপনের আশায় যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হতে চান। এখন তাদের জন্য এই ব্যাপারটা আর সহজ হবে না।’ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অভিবাসী বাংলাদেশি হোসেন বখতিয়ার জানান, ‘আমরা নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে আছি। বিশেষ করে কারিশিল্পের অবস্থা নিয়েও আমরা শঙ্কিত। তার ওপর ব্রেক্সিট নিয়ে যা হচ্ছে তাতে আমরা যারা অভিবাসী হিসেবে একা এই দেশে আছি, তারা হয়তোবা প্রিয়জনদের কাছে পাব না। তাদের এ দেশে এখন নিয়ে আসা আরও কঠিন হয়ে যাবে।’ ব্রেক্সিটের পর ইইউ নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশকালে পাসপোর্ট পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ আঙ্গুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন) সংরক্ষণের কথা বলা আছে পরিকল্পনায়।