শনিবার, ১৯ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেল চোরাই চক্র ঢাকার ৭ স্পটে

মাহবুব মমতাজী

রাজধানী ঢাকায় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে মোটরসাইকেল চোরের দৌরাত্ম্য। অন্তত ৭টি স্পটে এই চোর চক্র ঘুরছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্পটগুলো হলো- খিলগাঁও, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, হাই কোর্ট, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, মতিঝিল ও শান্তিনগর এলাকা। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ঢাকার ৭ স্পট থেকে মোটরসাইকেল চুরির নানা তথ্য পাওয়া গেছে। এখনো যারা গ্রেফতার হয়নি তারা উল্লিখিত ৭ স্পটে সক্রিয় রয়েছে। পুলিশ জানায়, এই চক্রের মূল হোতা আবু সাঈদ প্রকাশ ওরফে জুম্মন গত ২৬ জানুয়ারি গ্রেফতার হয়। তবে এর কয়েকদিন পর সে জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে যায় এবং আবার একই কাজে যুক্ত হয়। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানেও তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। পরবর্তীতে তার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য কাউছার, গোলাপ, আরিফ হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে খোকন ও নুর ইসলাম ওরফে নুরু মিয়া গ্রেফতার হয়। সর্বশেষ গত ২৪ এপ্রিল নুরু মিয়াকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের সদস্যদের বেশভূষা দেখে চেনার কোনো উপায় নেই যে, তারা মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত। এদের চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ অত্যন্ত সুন্দর, ভদ্র ও স্মার্ট। যে কেউ তাদের দেখে ধারণা করবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নয়তো ব্যাংক কর্মকর্তা। তাদের চুরির টার্গেটে থাকে তুলনামূলক দামি মোটরসাইকেল।

চুরির ক্ষেত্রে তারা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় ধরে রাখে। দুজন মিলে চুরির কাজ সম্পন্ন করে। একজন কানে মোবাইল ফোন রেখে পাহারাদারিত্ব করে এবং অপরজন মোটরসাইকেলের চাবির তার কেটে কিংবা তালা কেটে ৭ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে। চুরির পরপরই তারা টান দিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় ঢাকার বাইরে। তাদের বিক্রির নিরাপদ স্থান সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি এবং চালানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টদের তারা হাত করে রেখেছে। তারা এ পর্যন্ত ঢাকা থেকে চুরি করা বেশির ভাগ চোরাই মোটরসাইকেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ফেনীতে সরবরাহ করেছে। তাদের সিন্ডিকেটের আরও অন্তত ১২ জন এখনো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তৎপর রয়েছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, রাজধানীর শাহবাগ, কিশোরগঞ্জের সদর, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, গাজীপুরের জয়দেবপুরে একাধিক মামলা রয়েছে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, এই চোরদের দেখে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে, এরা চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এরা অত্যন্ত কৌশলে চুরি করে এবং চুরি হওয়া মোটরসাইকেল ঢাকার বাইরে সরিয়ে ফেলে।

জানা গেছে, গত মার্চ ২৮ ঘণ্টায় একই কায়দায় অন্তত চারটি বাড়িতে হানা দিয়েছিল এই চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এ সময় চুরি ঠেকাতে গিয়ে একজন নিরাপত্তাকর্মীও প্রাণ হারান। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত করা হয়েছিল আরও চারজনকে। এতে চিহ্নিত চোর শিবলির সংশ্লিষ্টতা পায় হাজারীবাগ থানা পুলিশ। এর আগেও তার বিরুদ্ধে এ ধরনের চুরির অভিযোগ ছিল। 

পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তথ্যানুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে রাজধানী ঢাকায়। গত বছরের শেষ তিন মাসে ঢাকায় মোট ৭৮টি মোটরসাইকেল চুরি হয়। ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন জেলাগুলোয় চুরি হয় আরও ৪৯টি। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে সারা দেশে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় ২৯২টি মামলা হয়। এর মধ্যেও সর্বোচ্চ চুরি হয় ঢাকা মহানগরে। এ ছাড়া ওই তিন মাসে চট্টগ্রাম মহানগর ও রেঞ্জে ৫৮, খুলনা মহানগর ও রেঞ্জে ২৩, রাজশাহী মহানগর ও রেঞ্জে ২৭, বরিশাল মহানগর ও রেঞ্জে ৯, সিলেট মহানগর ও রেঞ্জে ১২ এবং রংপুর রেঞ্জে ২৬টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। একই সময়ে উদ্ধার হয়েছে ১৩৫টি মোটরসাইকেল।

গত ৩ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আল মামুন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল পার্কিং করার ৫ মিনিটের মাথায় চুরি হয়ে যায়। ওইদিন আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে তিনি গাড়ি পার্কিং স্থানে মোটরসাইকেলটি রেখে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর