সহপাঠীর হাত ধরে চলায় মারধরের ঘটনা খুবই খারাপ আলামত দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ। গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এই মন্তব্য করেন। অর্থনীতি বিভাগের দুই সহপাঠীকে মারধরের ঘটনায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই মানববন্ধন করে। শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দুই সহপাঠী রোকেয়া গাজী লিনা ও আসাদুজ্জামান একে অপরের হাত ধরে হাঁটছিলেন। এ সময় ১০-১২ জন এসে তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বলে ও পরে মারধর করে। মারধরের ফলে রোকেয়া গাজী লিনার একটি পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উঠে যায়। এই ঘটনায় সূর্যসেন হল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত তিন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা এতে সন্তুষ্ট নন। তারা মারধরকারীদের ছাত্রত্ব বাতিল দাবি চেয়ে মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, এই ঘটনা খুবই খারাপ আলামত দিচ্ছে। এই খারাপ আলামত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। আমরা জানি পাকিস্তান আমলে ভিসি ওসমান গণি নিজেকে রক্ষা করার জন্য এনএসএফ তৈরি করেছিল। এনএসএফ সারা জায়গায় ছাত্রদের ওপর হামলা করেছিল। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। আয়ুব খানের কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি থাকবে না, বিশ্ববিদ্যালয় চলবে না।ঢাবি ভিসিকে ঘটনার লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানিয়ে এম এম আকাশ বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক কথা নয়। আইনসঙ্গতভাবেই ক্যাম্পাস চলবে। যদি আপনি ক্যাম্পাসের সার্বিক বিচরণের অধিকার রক্ষা করতে না পারেন, নিরাপত্তা দিতে না পারেন তাহলে পদত্যাগ করুন। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে আপনি ভিসি হয়েছেন। যদি প্রযুক্তিগত অসুবিধা হয় তাহলে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় প্রতি জায়গায় ফোন নম্বর থাকুক। যেখানে যে কেউ বিপদে পড়লে জিরো জিরোতে ফোন করলে তাকে রক্ষা করা যায়। আমরা এখানে কোটাপ্রথা নিয়ে কিছু বলছি না। আমরা শুধু একটা কথা বলছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। ছাত্র এবং শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে হবে।
মানববন্ধনে হামলার শিকার দুই শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ ও রোকেয়া গাজী লিনাও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, অন্যায়ভাবে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ট্রমায় ভুগছেন উল্লেখ করে আসাদ ও লিনা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমাদের ওপর কেন হামলা করা হলো শুধু এটুকুর জবাব চাই।’
মানববন্ধন থেকে নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ থেকে বাকি জড়িতদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সব সাধারণ শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। এসব দাবি আদায়ে ৭২ ঘণ্টা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান, অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানসহ বিভাগের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।