মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
শুনানিতে হাই কোর্ট

কোকাকোলার বোতলে বিকৃত শব্দ ভাষাকে খারাপের দিকে নিচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোমল পানীয় কোকাকোলার বোতলে ব্যবহৃত শব্দগুলো (প্যারা, ফাঁপর, মাথা নষ্ট, ইত্যাদি) বাংলা ভাষাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। গতকাল এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে। পরে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন ঠিক করেছে আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান রানা। কোকাকোলার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

শুনানিতে আইনজীবী মনিরুজ্জামান রানা কোকাকোলার বোতল বেঞ্চের সামনে হাজির করেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়। রিটকারীর আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘এ ধরনের ভাষার বিকৃতি বাংলা ভাষার জন্য অপমানজনক। অবিলম্বে বিজ্ঞাপনে ভাষার বিকৃতি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হোক।’ শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমি আমার জীবনে ‘প্যারা’ শব্দ শুনিনি, ব্যবহারও করিনি... কোকাকোলায় এটা কী ধরনের শব্দ ব্যবহার!’ কোকাকোলার পক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘কোকাকোলার বোতলের শব্দগুলো বাংলা ভাষাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে। এগুলোকে (কোকের বোতলের বিকৃত শব্দগুলো) বাংলা ভাষার শব্দ হিসেবে এভাবে ব্যবহার বা প্রচার করা যায় না। এসব শব্দের ব্যবহার বাংলা ভাষাকে আরও খারাপ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।’

অন্যদিকে কোকাকোলার আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম আদালতকে বলেন, রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া দেশের প্রচলিত আইনে বাংলা ভাষার ব্যবহার কোনো অপরাধ নয়। এ সময় আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কোকাকোলার আইনজীবীর কাছে জানতে চান, পানীয়তে বাংলা না লিখলে কী হতো? কোকের আইনজীবী উত্তরে বলেন, আমার ভালো লেগেছে, লিখেছি। তখন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, তাহলে লিখতেন পানির ঠিলি। এ সময় ব্যাপক হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আদালতে।

পরে রিটকারী আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান রানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত আমাদের রিটের শুনানি শেষ করেছে। মঙ্গলবার এ রিটের ওপর আদালত আদেশ দেবে। তবে এর আগে আমাদের রিট আবেদনটির কিছু অংশ সংশোধন করে আনার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।’

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কোকাকোলার বোতলে বাংলা ভাষার বিকৃত ব্যবহার বন্ধ, বাজারে থাকা কোকের বোতল প্রত্যাহার এবং এ নিয়ে প্রচারিত বিজ্ঞাপন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান। রিটে আইন মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয় সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বেভারেজ কোম্পানি কোকাকোলাকে বিবাদী করা হয়।

সর্বশেষ খবর