স্ত্রী হত্যার দায়ে ফাঁসির দন্ড নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। উপায়ান্তর না দেখে দেশের জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবীর কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়ে লিখলেন চিঠি। সেই চিঠি আমলে নিয়ে বিনা ফি-তে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করে দিলেন আইনজীবী। আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসের ফাঁসির দন্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ আসামির সাজা কমিয়ে ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ডও দিয়েছে।
আসামিকে কনডেম সেল থেকে দ্রুত সাধারণ সেলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি বিনা ফি-তে মামলা পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে ধন্যবাদ দেয় সর্বোচ্চ আদালত, যেটি পূর্ণাঙ্গ রায়েও উল্লেখ থাকবে বলেও জানায় আপিল বিভাগ।
আদালতে আসামি স্বপনের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।পরে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট আমার কাছে একটি চিঠি আসে নীলফামারী কারাগার থেকে। চিঠিতে একজন আসামি বাঁচার আকুতি জানিয়ে তার পক্ষে মামলা লড়তে অনুরোধ করেন। পরে বিষয়টি দেখে মামলার নথিপত্র সংগ্রহ করে আপিল বিভাগে তার পক্ষে মামলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিই। এরপর মামলাটি সম্প্রতি আপিল বিভাগের তালিকায় আসে। মামলায় আসামি স্বপনের পক্ষে আমরা শুনানি করি। আদালত উভয় পক্ষকে শুনে তার সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন দিয়ে রায় দেয়।’
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার নয়াটোল গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে (৩৫) হত্যা করেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। তাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করায় ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। পরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর স্বপনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল হাই কোর্টের রায়েও তার মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে।