সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে গরু টানা ঘানি

দিনাজপুর প্রতিনিধি

হারিয়ে যাচ্ছে গরু টানা ঘানি

গ্রামবাংলার হাটবাজারে কাঠের ঘানিতে বানানো খাঁটি সরিষার তেলের চাহিদা থাকলেও কৃত্রিম সরিষার তেল বাজার দখল করায় ঘানি শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও অনেক এলাকায় এখনো এ ঘানি শিল্পকে ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে এখন কাঠের ঘানির পরিবর্তে প্রযুক্তির আশীর্বাদে লোহার ঘানিতে ভাঙা হচ্ছে সরিষার সঙ্গে বিভিন্ন দ্রব্যাদি। ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা লোহার এ ঘানিগুলোতে কেবল সরিষা নয় তিল, তিশি, পাম ও সোয়াবিনও ভাঙানো হয়। এতে কাঠের ঘানির চেয়ে খরচও কম। তাই এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না কাঠের ঘানিতে বানানো খাঁটি সরিষার তেল।

আগে দিনরাত গরু দিয়ে কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোঁটায় ফোঁটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল গ্রাম-গঞ্জে মাটির হাড়িতে ফেরি করে এবং হাটবাজারে এ তেল বিক্রি হতো। এভাবেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন ঘানি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। বাজারে চাহিদা থাকলেও খরচ বাড়ায় এখন আর বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না তারা। আবার কোনো কোনো লোহার ঘানিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সরিষার সঙ্গে চালের গুঁড়া, পিঁয়াজ, শুকনা মরিচসহ অন্যান্য রাসায়নিকদ্রব্য মিশিয়ে ভেজাল সরিষার তেল উৎপাদন করছে। এভাবে কৃত্রিম তেল দখল করেছে সরিষা তেলের বাজার।

কৃত্রিম তেল কম দামে বিক্রি করায় ঘানিতে দিন-রাত পরিশ্রম করে খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করতে পারছেন না উৎপাদনকারীরা। ফলে প্রতিযোগিতায় তারা টিকে থাকতে পারছেন না।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কাঁটাবাড়ী, সুজাপুর, তেঁতুলিয়া, স্বজনপুকুর, মাদিলা, হড়হড়িয়াপাড়া, শিবনগর, চিরিরবন্দরের তেলীপাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার বিচ্ছিন্নভাবে গ্রাম-গঞ্জে এখনো ঘানিতে তেল উৎপাদন করছেন অনেকে। আবার অনেকে যুগের পরিবর্তনে আর পর্তা (সুবিধা) না হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। কাঁটাবাড়ী গ্রামের নন্দলাল সাহা বলেন, ‘আমার বাব-দাদার মূল ব্যবসাই ছিল কাঠের ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করা।’ চিরিরবন্দরের নশরতপুর ইউপির তেলি পাড়ার মোকসেদ আলী জানান, ঘানির সংখ্যা এখন হাতেগোনা। ঘানিভাঙা তেলের চাহিদার পরেও আধুনিক মেশিন নির্ভর শিল্প ও প্রযুক্তির প্রসারের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানি শিল্প। ৫ কেজি সরিষা ভাঙতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। এইভাবে দিনে একটি ঘানি থেকে ৩০  থেকে ৩৫ কেজি সরিষা ভাঙা সম্ভব হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি তেল বিক্রি হয় ৪০০ টাকা দরে। তবে কেমিক্যালসহ নানাভাবে সরিষার তেল বাজারে কম দামে বিক্রি করায় ঘানির খাটি সরিষার তেল চাহিদার পরেও বেশি দামের কারণে অনেকে কেনেন না।

তিনি আরও জানান, একটি ঘানিতে গড়ে একটি-দুটি করে গরু প্রয়োজন। গরুর লালন পালন, খাবার জোগাড় করা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ দেখভাল করতে শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। এ কারণে অনেকে ইচ্ছে থাকলেও আর ঘানি চালাতে চান না। আমার বাপ-দাদার আমল থেকে এ ব্যবসা চলে আসছে। গ্রামে একসময় সবাই এ পেশায় ছিল। এখন আর নেই।

সর্বশেষ খবর