বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
হত্যা ও মামলার ভয় দেখিয়ে জমি দখল

সাবেক এমপি গোলাপসহ আটজনের বিরুদ্ধে পাঁচ ভুক্তভোগীর মামলা

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরে সাবেক এমপি ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে জোর করে দখলে নিয়ে নির্মাণ করায় মাদারীপুর আদালতে পাঁচটি মামলা দায়ের করেছেন পাঁচ ভুক্তভোগী। এমপি থাকা অবস্থায় জোর-জবরদস্তির প্রতিবাদ করলে হামলা ও মামলার ভয় দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তবে দেরিতে হলেও আদালতের কাছে নায়বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা তাদের।

মামলার আসামিরা হলেন- ড. আবদুস সোবহান গোলাপ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এর সভাপতি, অধ্যক্ষ এবং আনারনেছা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট-এর সভাপতি ও অধ্যক্ষ। অন্যদিকে উত্তর রমজানপুর মডার্ন একাডেমির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এবং আলহাজ তৈয়ব আলী শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।

গতকাল মাদারীপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদুল হক চৌধুরীর আদালতে ভূমি আইনে মামলা করেন সাকিব হাসান, এ বি এম সালাউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম নুরুল আলম, রেহেনা বেগম ও মাসুম বেপারী।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সংসদ সদস্য থাকাকালীন জোরপূর্বক নিজ ও পরিবারের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। জমি লিখে না দেওয়ায় হত্যা ও মামলারও ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পরে রেজিস্ট্রি না করেই নির্মাণ করেন একাধিক ভবন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মুখ খুলতে সাহস পাননি এলাকার মানুষ।

 দেরি হলেও ন্যায়বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা ক্ষতিগ্রস্তদের। ভুক্তভোগী এ বি এম সালাউদ্দিন বলেন, ভূমি দখল প্রতিকার আইন অনুযায়ী আমরা পাঁচজনে আট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আশা করছি আদালত ন্যায়বিচার করবে। আমার পৈতৃক সম্পত্তি জোর করে নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য।

আরেক ভুক্তভোগী মেজর (অব.) বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম নুরুল আলম বলেন, গোলাপ মিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন তার রাজনৈতিক শক্তির কারণে আমরা কেউ জমির কাছাকাছিও যেতে পারিনি।

গোলাপের তান্ডপের কারণেই অনেক মানুষ বাড়িঘরেও থাকতে পারেনি। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ছিলেন। যখন তার ক্ষমতা কমতে থাকে, তখন এলাকার লোকজন বাড়িতে আসে। গোলাপ মিয়া যে জমিগুলো দখলে নিয়েছেন, এই জমি তিনি বা তার প্রতিষ্ঠানের নামে নেই। একজন এমপি গরিবের জমি এভাবে দখল করবে এটা কাম্য নয়।

আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, আমরা গোলাপের এই অন্যায়ের বিচার চাই। ক্ষমতা পেয়ে কৌশলে জমি দখলে নেওয়ার বিচার হতেই হবে। আর আমাদের জমি আদালতের মাধ্যমে ফেরত চাই।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আল আমিন প্রিন্স জানান, মামলার বাদী সবাই কালকিনির উত্তর রমজানপুরের বাসিন্দা। আর একই মৌজায় দখল হওয়া জমির পরিমাণ ৫ একর ৭৪ শতাংশ। চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আটজনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পিবিআইকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ মোবাইলফোনে জানান, তাকে হেয় করতেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একাধিক মামলা করছে। যাদের জমিতে প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেইসব জমি অর্থের বিনিময়ে, নতুবা কেউ স্বেচ্ছায় দান করেছেন, অথবা জমির পরিবর্তে কিছু ব্যক্তিকে অন্য জমি দেওয়া হয়েছে। এর আগেও নিজেদের জমি দাবি করে আদালতে মামলা করেছে, সেই মামলাও আদালত নিষ্পত্তি করেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আবারও এই মামলা দায়ের, উদ্দেশ্যমূলক।

সর্বশেষ খবর