বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব হাজার বছরের

সুমন পালিত

চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব হাজার বছরের

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক হাজার বছরের পুরনো। বাংলাদেশের বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর চীনের তিব্বতে প্রচার করেছেন মহাপুরুষ গৌতম বুদ্ধের বাণী। বিক্রমপুরের সন্তান অতীশ দীপঙ্করের সুনাম সেই প্রাচীন যুগেও ছড়িয়ে পড়েছিল ধারেকাছের সব দেশে। এ মহাপণ্ডিতের জ্ঞানালোকে আলোকিত হয়েছে মহাচীন। তিব্বতের অধিবাসীরা অতীশ দীপঙ্করকে আজও ভগবান বুদ্ধের পর শ্রেষ্ঠ গুরু হিসেবে মানে। তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় ‘জোবো ছেনপো’ বা মহাপ্রভু হিসেবে। তিব্বতের ধর্মগুরু লামারা নিজেদের এই মহাজ্ঞানীর উত্তরসূরি বলে পরিচয় দেন।

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সাত শতকের চীনা বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী হিউয়েন সাংয়ের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে চীন থেকে যাত্রা শুরু করে হিউয়েন সাং উত্তরের বাণিজ্যপথ ধরে মধ্য-এশিয়ার কুচ হয়ে উত্তর ভারতে পৌঁছান। কনৌজ নগরে পৌঁছে তিনি সম্রাট হর্ষবর্ধনের আতিথ্য লাভ করেন। তিনি মগধের বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থান পরিদর্শন করেন এবং তৎকালীন বিখ্যাত বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র নালন্দা মহাবিহারে পড়াশোনায় অতিবাহিত করেন। এরপর তিনি বাংলার বিভিন্ন এলাকা এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারত ভ্রমণ করে পুনরায় মধ্য এশিয়া হয়ে চীনে প্রত্যাবর্তন করেন। হিউয়েন সাংয়ের গ্রন্থ জিউ জি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর সর্ববৃহৎ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সংবলিত গ্রন্থ। বাংলাদেশে অবস্থানকালে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্র তিনি সযত্নে সংগ্রহ করেছেন। বাংলায় ভ্রমণকৃত বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ছিল প্রধানত কর্ণসুবর্ণের নিকটবর্তী রক্তমৃত্তিকা, পুণ্ড্রনগর ও এর সংলগ্ন এলাকা, সমতট ও তাম্রলিপ্তি। তাঁর বিবরণ বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে ব্যাপক সহায়তা করে। সাত শতকের বাংলার ইতিহাস, বিশেষ করে শশাঙ্কের শাসনাধীন গৌড় রাজ্য সম্বন্ধে হিউয়েন সাংয়ের দেওয়া তথ্যউপাত্ত ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান।

 

চীন ও বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের ইতিহাস অভিন্ন

চীনে ইসলাম প্রচারের সঙ্গেও রয়েছে বাংলাদেশের যোগসূত্র। গত এক শতাব্দী ধরে ইতিহাসবিদরা বলে আসছেন, বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের শুরু একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে। কিন্তু লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামে একটি টিলা খনন করে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন এক মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। যার শিলালিপিতে স্পষ্ট আরবি অক্ষরে লেখা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ হিজরি সন ৬৯।’ অর্থাৎ ৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মসজিদটি।

মসজিদটি নিয়ে যারা গবেষণা চালিয়েছেন, তাদের অভিমত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একজন সাহাবি মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। তার নাম সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)। চীনের কোয়াংটা শহরে নির্মিত মসজিদে তার সমাধি রয়েছে। এর ফলে বলা যায়, চীন ও বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়েছে সাহাবি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের মাধ্যমে। সেই প্রাচীনকালে বাংলাদেশ হয়ে আরব ও রোমান ব্যবসায়ীরা চীনে যাওয়া-আসা করতেন। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিলের ধারণা, ব্যবসায় সূত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে আরবদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যার প্রমাণ এই মসজিদটি। ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে মসজিদটি আবিষ্কার হওয়ার পর পাল্টে গেছে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের ইতিহাস। প্রাচীনকালে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় বেয়ে রোমান ও আরব ব্যবসায়ীরা ভুটানের মধ্য দিয়ে চীনে যাওয়া-আসা করতেন।

চীনা মুসলিমদের কিংবদন্তি অনুসারে, সপ্তম শতাব্দীর দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় দশকে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এর সাহাবি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, সাঈদ, ওয়াহাব ইবনে কাবছা এবং আরও একজন সাহাবি চীনকে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে পরিচিত করে তোলেন। ওয়াহাব ইবনে আবু কাবছা আল-হারিস ইবনে আব্দিল উজ্জার সন্তান বলে চীনা মুসলমানদের ধারণা। ওয়াহাব ইবনে কাবছা ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্ভবত, সাগরপথে ক্যান্টনে পৌঁছান। সুহায়লা আবুয়ারজা, উয়াইস করনি ও হাসসান ইবনে সাবিত এই তিন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে আরব থেকে চট্টগ্রাম হয়ে চীনে যান এবং সাগরপথে আরবে ফিরে আসেন। কিছু সূত্রমতে চীনের সঙ্গে ইসলামের পরিচয় ঘটে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস সম্রাট গাওজংয়ের দরবারে খলিফা উসমানের দূত হিসেবে চীনে তৃতীয়বারের মতো অবস্থানকালে। বাংলাদেশ হয়ে স্থলপথে আরব বণিক এবং ধর্মপ্রচারকরা যেমন চীনে গেছেন, তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরে বিরতি দিয়ে পৌঁছেছেন চীনা বন্দরে।

আধুনিক যুগে চীনে কিং সাম্রাজ্যের পতনের পর জাতীয়তাবাদী চীনের প্রতিষ্ঠাতা সান ইয়াত-সেন ঘোষণা করেন যে হান, মান (মানচু), মেং (মঙ্গোল), হুয়েই (মুসলিম) জাতি সমানভাবে চীনের দাবিদার। কুওমিনতাং দলের শাসনামলে দলটি মা ক্লিক নামক পরিবারের মুসলিম সেনাপতিদের কিংহাই, গানসু এবং নিনজিয়া প্রদেশের সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করে। ওই আমলে বাই চংজি নামের একজন মুসলিম জেনারেল চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন।

দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলাকালে চীনা মুসলমানরা বিদেশি হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ফলে মুসলমানরা জাপানিদের টার্গেটে পরিণত হয়। জাপানিরা ২২০টি মসজিদ ধ্বংস করে এবং ১৯৪১ সালের এপ্রিলের মধ্যে অগণিত হুয়েই জনগোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা করে। হুয়েই মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ দাচাং জাপানিদের হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়ায়। নানকিংয়ে ব্যাপক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার মসজিদগুলো মুসলমানদের লাশে ভরে যায়।

মাও সে তুংয়ের আমলে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় মসজিদ, প্যাগোডা, গির্জাসহ অন্যান্য ধর্মের বহু উপাসনালয় বন্ধ ও ধ্বংস করা হয়। লাল সেনারা বহু মন্দির, গির্জা, বৌদ্ধ ও তাওবাদী মন্দির এবং কবরস্থান ধ্বংস করে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালে হুয়েই মুসলিমরা বিদ্রোহ করে। যা ছিল সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিরুদ্ধে সংঘটিত একমাত্র শক্তিশালী জাতিগত বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহ দমনে বিমান হামলা চালিয়ে প্রায় ১৬০০ হুয়েইকে হত্যা করা হয়। চীনে সে সময় মাও সে তুংকে সামনে রেখে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করত গ্যাং অব ফোর বা চার কুচক্রী। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন মাও সে তুংয়ের স্ত্রী জিয়াং কিং এবং তার তিন সহযোগী। ‘গ্যাং অব ফোর’ এর পতনের পর মুসলমানদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। ১৯৭৮ সালে চীন সরকার মুসলমানদের প্রতি উদার নীতি গ্রহণ করে। বিচ্ছিন্নতবাদী ও সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলমানদের সঙ্গে চীনা সরকারের সম্পর্ক তিক্ত হলেও অন্য ৯টি মুসলিম জাতি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বেশ গভীর। চীনের শীর্ষ নেতারা সবচেয়ে বড় মুসলিম জাতিগোষ্ঠী হুয়েই মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে চীন সরকার ‘চিং ফেংসু’ নামে ইসলাম অবমাননাকারী একটি বই নিষিদ্ধ করে। লানচৌ ও বেইজিংয়ে হুয়েই মুসলিমদের বিক্ষোভের পর বইটির লেখককে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় চীনা পুলিশ হুয়েই মুসলিম বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা প্রদান করে এবং চীন সরকার প্রকাশ্যে বইটি পোড়ানোর ব্যবস্থা করে।

চীনের মোট জনসংখ্যার দেড় শতাংশের বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী। চীনা সমাজ এবং রাজনৈতিক কাঠামোতে হুয়েই মুসলমানরা বেশ সম্মানের অধিকারী। উইঘুর জনগোষ্ঠী মুসলিম জনসংখ্যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম হলেও নিংশিয়া, কানসু ও ছিংহাই প্রদেশে উল্লেখযোগ্য মুসলমান বাস করে। চীনের সরকারিভাবে স্বীকৃত ৫৫টি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০টি গোষ্ঠীই মুসলিম।

ধর্মীয় সূত্রে চীনের সঙ্গে প্রাচীন ও মধ্যযুগে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার ধারাবাহিকতা রয়েছে আধুনিক ইতিহাসেও। চীনে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে মাও-সে-তুংয়ের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে কমিউনিস্ট পার্টি। তাদের নেতৃত্বে এক সময়কার আফিমখোর মানুষের দেশ চীন নেশার ঘোর কাটিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। সামরিক শক্তির দিক থেকে চীন এখন তৃতীয়। তবে দুই ক্ষেত্রেই তাদের লক্ষ্য প্রথম স্থান অর্জন। অনেকেরই জানা, রাশিয়ায় প্রথম সংঘটিত হয় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, ত্রতস্কি ও স্তালিনের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে কমিউনিস্টরা। নব্বই দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চীন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন- স্তালিনের পাশাপাশি মাও-সে-তুংকে মহাগুরু হিসেবে মানেন সারা বিশ্বের কমিউনিস্টরা। মাও-সে-তুংয়ের গুরু হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন যে কমিউনিস্ট নেতা তিনিও একজন বাঙালি। তার নাম এম এন রায় বা মানবেন্দ্র নাথ রায়।

 

বঙ্গবন্ধুর চীন সফর

আজকের যুগের সুপার পাওয়ার চীনকে আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক দীক্ষাদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ অনন্য ভূমিকা রাখলেও দুই দেশের সম্পর্কে কখনো কখনো টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। তবে অতীতের সেসব অধ্যায় কাটিয়ে চীন এখন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেশ। অন্যতম বাণিজ্যিক সহযোগী। উন্নয়ন সহযোগী তো বটেই। তরুণ বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চীন সফরের মাধ্যমে দুই দেশের নব পর্যায়ের সম্পর্কের সূচনা হয়। বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনে ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীও। বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে চীন সফরের বর্ণনা দিয়েছেন।

 

মিং রাজবংশের ওপর মুসলিম প্রভাব

শুরুতেই বলেছি, চীনে ইসলাম প্রচার হয়েছে মহানবীর (সা.) সাহাবিদের আমলে। সে দেশের মুসলিম সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। চীন সম্পর্কে আরব তথা মুসলমানরা ছিল শ্রদ্ধাশীল। মহানবীর হাদিসে জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনে যাওয়ারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

চীনে ১৩৪৮ সালে মিং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়। এ সময় তুর্কিভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠী চীনে এসে আস্তানা গাড়ে। চীনা সংস্কৃতির সঙ্গে তারা মিশে যায়। মিং রাজবংশের ওপর মুসলমানদের প্রভাবও ছিল ব্যাপক। মিং সম্রাট ঝু উয়ান ঝাংয়ের অন্যতম শীর্ষ সেনাপতি লান ইয়ু ছিলেন একজন মুসলিম। উত্তর এশিয়ায় মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ চীনা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তিনি। ওই অভিযানে দুর্ধর্ষ মোঙ্গলরা পরাজিত হয়। চীনা সাম্রাজ্য একটি বড় হুমকি থেকেও মুক্তি পায়। যুদ্ধে মোঙ্গল রাজপরিবারের সদস্যসহ ৮০ হাজার সৈন্য বন্দি হয়। মিং সাম্রাজ্যের আরও দুজন খ্যাতনামা মুসলিম সেনাপতির নাম ছিল মুয়িং ও হু দাহাই। মুয়িং য়ুনান প্রদেশের গভর্নর পদেও দায়িত্ব পান। চ্যাং য়ুচান ছিলেন মিং বংশের আরেক প্রভাবশালী মুসলিম সেনাপতি। মহাবীর হিসেবে চীনে তার ভাবমূর্তি ছিল সেই মধ্যযুগে। ১৩৬৯ সালে তিনি মারা গেলে চীনা সম্রাট গভীরভাবে শোকাবিভূত হন। প্রিয় সেনাপতিকে নিয়ে তিনি একটা কবিতাও লেখেন।

মিং সম্রাটদের আমলে চীন এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নৌ অভিযান পরিচালনা করে। এর নেতৃত্ব দেন এডমিরাল ঝেং হে। তিনিও ছিলেন মুসলিম। ১৪০৫ সালের ১১ জুলাই ৩১৭টি জাহাজ ও ২৮ হাজার নৌ সেনা নিয়ে তিনি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যান। উদ্দেশ্য ছিল ওইসব দেশের সঙ্গে মৈত্রীর বন্ধন স্থাপন করা। এডমিরাল ঝেং হের নেতৃত্বে চীনা নৌবহরটি চট্টগ্রাম বন্দরেও আসে। চীনের সঙ্গে প্রাচীন বাংলার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে যা ভূমিকা রাখে।

চীনে মুসলমানদের বসবাস ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। কিন্তু কমিউনিস্ট শাসনের শুরুতেই মুসলমানদের একটি ক্ষুদ্র অংশের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অশুভ প্ররোচনা ছিল এমন অভিযোগও রয়েছে। তারা চীনের উইঘুর মুসলমানদের উসকে দেয় চীনা শাসকদের বিরুদ্ধে। উইঘুর মুসলমানরা শত শত বছর ধরে চীনে বাস করছে। চীন তাদের মাতৃ ও পিতৃভূমি। অন্য সব নাগরিকের মতো চীনে তাদের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। তবে পশ্চিমা শক্তির পুতুল হয়ে কাজ করলে তার পরিচয় যাই হোক, চীন সরকার তাদের মেনে নিতে রাজি নয়। নিজেদের স্বার্থেই উইঘুর মুসলমানদের বুঝতে হবে বাইরে থেকে যারা যাদের উসকানি দিচ্ছে তারা তাদের বন্ধু নয়। বেশির ভাগ মুসলিম দেশও উইঘুরদের যারা উসকানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি সৌদি আরবও।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

[email protected]

সর্বশেষ খবর