সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

কেনায় কাঁটা

কেনায় কাঁটা

বাংলা ছবির একটা গান আছে-'খুঁজে খুঁজে জনম গেল কাঁদল শুধু এই আঁখি।' ঈদের সিজনে এই গানের কথাগুলো বেচারা স্বামীদের মনের কথায় পরিণত হয়। কারণ বউরা যখন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরে ঘুরে পছন্দের শাড়ি আর এটা সেটা খুঁজতে থাকে, তখন স্বামীদের জান যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তাদের অাঁখি কাঁদতে বাধ্য হয়। এই অবস্থায় সরাসরি কাঁদাও যায় না, কান্না আটকিয়েও রাখা যায় না। কাঁদলে হবে ন্যাকামি, না কাঁদলেও চেহারা হয়ে যায় বাংলা পাঁচের মতো। এমন শোচনীয় দশা। বউরা তবু তাদের মুক্তি দেয় না। প্রয়োজনে কান্না মোছার জন্য টিস্যু বঙ্ কিনে দেবে, তবু পেছনে পেছনে ঘুরে ব্যাগ টানা থেকে রেহাই নেই। যদিও টিস্যু বঙ্ কেনার টাকাটাও হতভাগা স্বামীর পকেট থেকেই যায়। এক স্বামী তার বউয়ের সঙ্গে শপিং করতে গিয়ে ব্যাগ টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ভয়ে ভয়ে সে বউকে জানাল_চলো বাসায় চলে যাই। কারণ হাঁটতে হাঁটতে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে। বউ তার লিপস্টিক ভরা ঠোঁটে হাসির ঝলক এনে বলল_ও এই কথা! আরে এটা কোনো ব্যাপার না। এছাড়া এতক্ষণ তো শুধু আমার জন্য কিনেছি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে উত্তর প্রস্তুত আছে। এ তোমার জন্য কিছু কিনতে হবে না? একে বলে কৌশলী উত্তর। নিজের জন্য কিছু কেনা হবে শুনে স্বামী খুশিতে গদগদ হয়ে উঠল_আচ্ছা, আমার জন্য কী কিনবে? বউ বলল_কী কিনব বুঝতে পারছ না? তুমিই না বললে হাঁটতে হাঁটতে তোমার পা ব্যথা হয়ে গেছে! চলো, তোমার জন্য মলম কিনব। যাতে মলমটা মেখে আবার নতুন উদ্যমে হাঁটা শুরু করতে পার। এক লোক তার বউকে একটার পর একটা দামি জিনিস কিনতে দেখে রাগে-দুঃখে হতাশায় দোকানের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু এখানেও শান্তি নেই। বউ এসে চোখ-মুখ পাকিয়ে বলতে লাগল_এই, তুমি এখানে কী করছ? জ্যান্ত মেয়েদের কাছে পাত্তা না পেয়ে এখন প্লাস্টিকের মেয়েদের সঙ্গে টাংকি মারার চেষ্টা করছ, তাই না? উল্লেখ্য, লোকটা তখন দোকানের সামনে দাঁড় করানো লেডি আকৃতির প্লাস্টিকের পুতুলগুলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। আমার এক বন্ধু সবসময়ই দার্শনিকসুলভ কথা বলার চেষ্টা করে। ঈদ নিয়ে তার দার্শনিক মার্কা কথা হচ্ছে_ঈদুল ফিতরও কাটাকাটির মাস। আমরা মৃদু প্রতিবাদ জানাই_ঈদুল ফিতর কাটাকাটির মাস হয় কী করে। কাটাকাটির মাস তো ঈদুল আজহা। বন্ধু বলে_ঈদুল আজহার তুলনায় ঈদুল ফিতরে মানুষ শপিং বেশি করে। তাই ঈদুল আজহায় গরুর গলা কাটা হলেও ঈদুল ফিতরে দোকানদাররা কাটে পাবলিকের গলা। তো পাবলিক যদি গলা কাটার যন্ত্রণা সহ্য করে শপিং করতে পারে, তাহলে আমাদের কী! না, কিছু না। তবে এটাও ঠিক, দলে দলে শপিংয়ে বের হওয়ার কারণে ঢাকা শহরে সুদূরপ্রসারী জ্যাম লাগে। এক লোক অফিসে টি-শার্ট পরে ঢুকতেই ক্ষেপে গেলেন বস_আপনাকে না বলেছি ফর্মাল ড্রেস পরে অফিসে আসতে? আপনি টি-শার্ট পরে এলেন কোন সাহসে! লোকটা বলল_স্যার, বাসা থেকে ফর্মাল ড্রেস পরেই বের হয়েছিলাম। কিন্তু বাস জ্যামে আটকা পড়ার পর যখন হরদম যাত্রী উঠছিল, তখন ধাক্কাধাক্কিতে শার্টটা কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল। ভাগ্যিস, ফুটপাত থেকে টি-শার্টটা কিনতে পেরেছিলাম। নইলে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে অফিসে আসতে হতো। এখন শপিংয়ের সুবিধার্থে রমজানের শুরুতেই স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে দিন এ ব্যাপারে কথা বলে এক ছোট ভাইকে উপদেশ দিচ্ছিলাম_দেখ, সবার উপরে হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। ছোট ভাই ফট করে বলে উঠল_জী না, শিক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শপিং। এই শিক্ষা না নিয়ে কত জনে রসাতলে গেল সেটা হিসাব করে বের করতে যাবেন না আবার-

এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। জানেন তো শেখার কোনো শেষ নেই।

 

 

সর্বশেষ খবর