সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

টিকিট-বিষয়ক কয়েক লাইন

টিকিট-বিষয়ক কয়েক লাইন

বাড়ি ফেরার টান যে নাড়ির টান এটা ঈদ এলেই বেশ ভালোভাবে টের পাওয়া যায়। পত্র-পত্রিকা, টিভি মিডিয়ার বদৌলতে সেই নাড়ির টানের খবর ও চলমান চিত্রের দেখা মেলে। নানা রকম বিশেষণ মিলিয়ে ফলাও করে ছাপা হয় একটি টিকিট হাতে... না, না একটি সোনার হরিণ হাতে বিজয়ী বেশে হাসিমাখা মুখের ছবি। এই সোনার হরিণের জন্য টিভি ক্যামেরাগুলোতে ধরা পড়ে টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘায়িত লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলো। এই লাইনের পেছনেও অনেক গল্প জমা হয়। কেউ কেউ ভোর রাতেই এসে দাঁড়িয়েছেন, এখন বাজে বেলা ১১টা যেখানে ছিলেন মোটামুটি সেখানেই আছেন_ সামনে এগোনোর নাম নেই। কেউ কেউ গত রাতেই স্টেশনে এসেছেন, সঙ্গে খাবার ও বিছানাতুল্য একটি পত্রিকার কাগজ। সারা রাতের স্টেশন দেখে সকালেই পেয়েছেন একটি টিকিট এবং অবশ্যই তিনি বিজয়ী। তো বিজয়ী যারা হয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা ঘাঁটলেই জানা যায় তারা পরিশ্রমী ছিলেন, ধৈর্যশীল ছিলেন। সবুরে মেওয়া ফলে কিনা সেটা জানা না গেলেও তারা জেনে যান সবুরে টিকিট মেলে। চাইলেই সবকিছু যে পাওয়া যায় না সেটারও একটা উদাহরণ তৈরি হয়ে যায় টিকিট না পাওয়ার বেদনাতে। চাইলেই পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে একটা মেজাজ খারাপ করা জোকস আছে। এক ছেলে তার বাবার কাছে গিয়ে একটা মোটরসাইকেল চাইল। বাবা বললেন, মোটরসাইকেলের দরকার কী? হেঁটেই ুতো চলাফেরা করা যায়। তোর দুই পা আছে কী জন্য! ছেলে কাচুমাচু করে বলল, একটা পা আছে মোটরসাইকেলের গিয়ার চেঞ্জ করার জন্য। আর আরেক পা ব্রেক করার জন্য। জোকসের ছেলেটা পার পেয়ে গেলেও এই ধরনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বাস্তবজীবনে খুব একটা সুবিধা করা যায় না। বাস্তবজীবনে টিকিট পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠানোর চেষ্টাই করতে হয়। বাস অথবা ট্রেনের টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। আপনি টিকিটের জন্য কতটা পেরেশান সেটার ওপর নির্ভর করেই টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন। টিকিট কাউন্টারের সামনে ২৪ ঘণ্টা আগে দাঁড়ালেও লাইন ধরতে হবে। লাইন ধরে দাঁড়ানোর এ শিক্ষা জীবনের বিভিন্নভাবে কাজে লাগবে নিশ্চিত থাকতে পারেন। যা হয় আরকি, লাইন ধরে দাঁড়ানোর পর আপনার বেশকিছু করণীয় আছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি কিসের লাইনে দাঁড়ালেন সেটা জেনে নেওয়া। আমার এক দূরসম্পর্কের মামা একবার লাইনে দাঁড়িয়ে এই মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেননি। ফলশ্রুতিতে শেষে টের পান তিনি আসলে টিকিট কাউন্টারের লাইন ধরেননি, ধরেছেন স্টেশন টয়লেটের। এটাকে পরিণতির দিক থেকে বিবেচনা করলে ভীষণ ব্যাড়াছ্যাড়াময় পরিস্থিতি বলা যায়। এজন্য লাইন ধরাটাই সব নয়, বুঝে-শুনে লাইন ধরতে হবে। টিকিট পাওয়া এত সহজ জিনিস না এটা বুঝতে হবে। বুঝে-শুনে লাইন ধরে বাকিটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয়। অবশ্য চালাকচতুর পাবলিকরা বুঝে-শুনে লাইন ধরেও চোখ-কান খোলা রাখেন। কেউ লাইন ব্রেক করে এগিয়ে গেল কিনা, কেউ দুটি টিকিট কিনে একটি বিক্রয় করে দেওয়ার ধান্ধা করছে কিনা, এসবও চোখে-কানে মনিটরিং করে। মনিটরিং নিয়ে একটা প্যাথেটিক জোকস বলা যায়। একবার এক মহিলা মারা গেছেন। লাশ নিয়ে যাচ্ছেন তার স্বামী। স্বামীর পেছনে একটি কুকুর, এর পেছনে বহু লোক। এক লোক এসে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল, কি হইছে ভাই, এত লোকজন কেন?

: আমার বউ মারা গেছে।

: ওহ দুঃখিত। তো কীভাবে মারা গেল?

: ওইযে কুকুরটা দেখতে পাচ্ছেন, সেটার কামড়ে।

: ভাই আমারে একটু ধার দেবেন আপনার কুকুরটা।

: ঠিক আছে তাইলে লাইনের পেছনে গিয়ে সিরিয়াল দেন।

এই জোকসটা শোনার পরও যদি কিছু বলার থাকে তাহলে আগে লাইনে দাঁড়ান। এটাই শেষ কথা।

 

 

সর্বশেষ খবর