সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বইমেলায় ম্যালা ক্যামেরা

ইকবাল খন্দকার

বইমেলায় ম্যালা ক্যামেরা

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, আইডিয়া : তানভীর

আমার এক বড় ভাই বললেন, যাই বলিস, এই যুগের তরুণ-তরুণীদের নজর কিন্তু নিচে না। প্রত্যেকের নজরই খুব উপরে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ তরুণ-তরুণীদের নজর নিয়ে কথা বলছেন যে? বড় ভাই বললেন, এখন বইমেলা চলছে। অতএব, নজর নিয়ে কথা বলার এখনই তো মোক্ষম সময়। আসলে বইমেলায় না গেলে তুই বুঝতেই পারবি না তাদের নজর যে কতটা উঁচুতে। আমি বললাম, বইমেলায় এমনকী আছে, যা দেখে তরুণ-তরুণীদের নজর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়? বড় ভাই বললেন, বইমেলায় রয়েছে বিশেষ একটা জিনিস। যে জিনিসের নাম হচ্ছে ক্যামেরা। সেটা মোবাইলের ক্যামেরা বলিস আর টিভি ক্যামেরাই বলিস। এই ক্যামেরার দিকে তাকাতে গিয়ে সবাই উপরের দিকে তাকায়। কেউ কেউ তো সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল কয়েক হাত উপরে তোলে। তারপর মুখ বাঁকা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। টিভি ক্যামেরাওয়ালাও মাচা বানিয়ে উপরে দাঁড়ায়। তখন ক্যামেরা থাকে তাদের কাঁধের উপরে। আর সেই ক্যামেরার দিকে তাকাতে গিয়ে অনেকে চোখ-মুখ এত উপরে তোলে যে, ঘাড় প্রায় ব্যথা হয়ে যায়। আমার মনে হয় কী জানিস, বইমেলায় যদি ঘাড় মালিশের মলম নিয়ে ঢোকা যায়, তাহলে ভালোই বিক্রি হবে। আমার এক চাচাত ভাই মেলা থেকে ঘুরে আসার পর বাড়িতে গিয়ে আমাকে ফোন দিল। বলল, আপনার সঙ্গে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আপনি কোন স্টলে বসেন আমি ঠিক জানিও না, দেখাও করতে পারলাম না। আমি বললাম, দেখা করার ইচ্ছে না থাকলে দেখা কীভাবে হবে। চাচাত ভাই বলল, সত্যি ভাই, আপনার সঙ্গে আমার দেখা করার শতভাগ ইচ্ছে ছিল। আমি বললাম, এত ইচ্ছে থাকলে আমাকে ফোন করলেই হতো। চাচাত ভাই এবার অবাক হলো, ফোন! ফোন করব? ফোন করব কীভাবে? কী দিয়ে? আমি দ্বিগুণ অবাক হয়ে বললাম, ফোন কী দিয়ে করবি মানে? মোবাইল দিয়ে করবি। কেন, তোর কাছে কি মোবাইল ছিল না? চাচাত ভাই বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, মোবাইল তো ছিলই। কিন্তু মোবাইলের কথা মনে ছিল না ভাই। আসলে মোবাইল জিনিসটা যে ফোন করার কাজে ব্যবহার করতে হয় বা করা উচিত, এটাই ভুলে গিয়েছিলাম। আমার বারবার মনে হচ্ছিল মোবাইল জিনিসটা দিয়ে ছবি তোলা ছাড়া আর কোনো কাজ হয় না। খুব বিজি ছিল ভাই। আমার এক ভাবি এমনিতে শপিংমল ছাড়া আর কোনো জায়গায় না গেলেও এবছর বেশ কবার মেলায় গেলেন। আমি ধরেই নিয়েছিলাম মেলায় গিয়ে তিনি কেবল রান্নার বই-ই কিনেছেন। কিন্তু যখন জানতে পারলাম রান্নার বই ছাড়া অন্যান্য বইও কিনেছেন, তখন মনটাই ভরে গেল। আমি ভাবিকে ধন্যবাদ দিলাম বিভিন্ন রকম বই কেনার জন্য। ভাবি প্রথমে আমার ধন্যবাদ গ্রহণ করলেন। তারপর বললেন, আমার প্রথম ইচ্ছে ছিল শুধু রান্নার বই কিনব। কিন্তু ছবি তোলার স্বার্থে অন্যান্য বইও কিনতে হলো। ভাবির কথা শুনে আমি টাশকি খেলাম। বললাম, ছবি তোলার স্বার্থে বই কিনেছেন মানে? ভাবি বলল, মন্দ বললাম কী! রান্নার সব বইয়ের কভার তো আর কালারফুল না। তাই যেসব বইয়ের কভার কালারফুল, সেটাই কিনেছি। হোক সেটা রান্না কিংবা কবিতার বই। অথবা উপন্যাস। আসলে কালারফুল কভারওয়ালা বইটা হাতে নিয়ে ছবি তুললে ছবিটাও কালারফুল আসে। দাঁড়ান, আপনাকে দুই কপি ছবি দেখাচ্ছি। আপনি আবার কালারব্লাইন্ড না তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর