‘ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানাবগির ছা।’ যেহেতু তালগাছে কানাবগি দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে, সেহেতু তালগাছের প্রকৃত দাবিদার হওয়ার কথা ছিল কানাবগির। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে খেয়াল করছি, তালগাছের মালিক হওয়ার জন্য মনুষ্য প্রজাতির মধ্য থেকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময় দাবি উপস্থাপন করে আসছে। আর যারা এ দাবি উপস্থাপন করছে, তারা স্বীকার করছে যে তারা বিচার মানে। বিচার মানলেও তালগাছের মালিক অন্য কেউ হয়ে যাবে, এটা মানতে তাদের অগাধ আপত্তি। যা-ই হোক, তালগাছ এবং এর মালিকানার ব্যাপারে শিরোনাম বলে রাখলাম, বিস্তারিত বলব একটু পরে। আমাদের সঙ্গেই থাকুন। আমাদের দেশের সিনেমার পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সীমা নেই। কী অভিযোগ? তারা গল্প নকল করে। নানা দেশের গল্প অনুসরণ অনুকরণ করে সিনেমা বানায়। আমাদের দেশের কিছু কিছু সংগীত পরিচালকের বিরুদ্ধেও প্রায় একই অভিযোগ— তারা ভিনদেশের গানের সুর নকল করে। আর আমরা যারা আমজনতা, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, আমরা নিজের দেশীয় স্টাইল অনুসরণ না করে বিদেশি স্টাইল অনুসরণ করি। সেটা হেয়ারকাট হোক কিংবা পোশাক-আশাকের ডিজাইনের ক্ষেত্রেই হোক। এই যে বিদেশের সবকিছু অনুসরণ অনুকরণের কমন অভিযোগটা আমাদের বিরুদ্ধে, এই অভিযোগ ছুড়ে ফেলে দেওয়ার সময় এখন চলে এসেছে। শুধু চলেই আসেনি, ইতিমধ্যে সময়টা শুরু হয়ে গেছে। একটু ভেঙে বলা প্রয়োজন। বাংলাদেশে নির্বাচন হলে কী হয়? যে দল জেতে, সে দল বিস্তর খুশি থাকে। আর যে দল হারে, সে দল শুরু করে দেয় অভিযোগ। নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে, এ নির্বাচন মানি না, আবার নির্বাচন দিতে হবে— এ ধরনের বহু কথা তখন বেরিয়ে আসে হারু পার্টির প্রধানের মুখ থেকে। কখনো কখনো গায়ের জোর প্রদর্শনের জন্যও উঠেপড়ে লাগে হারুপার্টির নেতা-কর্মীরা। এসব কাণ্ড-কারখানা দেখে দেখে তিতা হয়ে আমরা প্রায়ই দীর্ঘশ্বাস ছাড়তাম— আহা! এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মনমানসিকতা যদি আমেরিকাসহ অন্যান্য উন্নত দেশের নেতাদের মনমানসিকতার মতো হতো! যদি তারা নির্বাচনের ফলাফল সহজভাবে মেনে নিতে শিখত! যদি বিজয়ীকে অভিনন্দন জানিয়ে মহত্ত্বের পরিচয় দিত! আমাদের এই দীর্ঘশ্বাস কেবল বিফলেই গেছে। তবে শুধু বিফলে গেলে ঠিক ছিল, ফলাফল হয়ে গেছে উল্টো। আমরা তো তাদের মতো হতে পারিইনি, বরং তারা হয়ে গেছে আমাদের মতো। আর এরই মধ্য দিয়ে বিদেশি জিনিসকে অনুসরণ অনুকরণ করার একটা অভিযোগ যে আমাদের বিরুদ্ধে ছিল, সেই অভিযোগটা ‘নাই’ হয়ে গেছে বলে আমরা জোরালোভাবে মনে করি। নাহ, এখন আমরা বিদেশকে নকল করি না, বিদেশ আমাদের নকল করে। আমাদের দেশের হারু পার্টিরা তাও তো নির্বাচনের পর কারচুপিসহ হরেক অভিযোগ তোলে, আর আমেরিকার এক নেতা অভিযোগ তুলে বসে আছেন নির্বাচনের আগেই। এক কাঠি সরেস বলে একটা কথা আছে না? তিনি আসলে সেটাই। অনেক সময় বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বেশি মোটা হয়। উনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সিস্টেমটা শিখলেন আমাদের কাছ থেকে, অথচ এখন তিনি আমাদেরও ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আগেভাগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, হারলে তিনি নাকি ফলাফল মানবেন না। আসুন এবার তালগাছ প্রসঙ্গে ফিরে যাই। যার কথা বলছি, তিনি কিন্তু বিচার মানে নির্বাচন মানছেন। কিন্তু ফলাফলটা অর্থাৎ তালগাছটা তার পক্ষে থাকতে হবে, এটাই হচ্ছে তার দাবি। এটাকে মামারবাড়ির আবদার বলব না খামারবাড়ির আবদার বলব, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তিনি যদি সত্যি সত্যি ফলাফল না মানেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে টাইপ অভিযোগ করেন, তাহলে তো আন্দোলন দানা বেঁধে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। এমনও হতে পারে আন্দোলনকে বেগবান করতে তিনি মাঠে নেমে নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বও দিতে পারেন। তখন যে দল সরকার গঠন করবে, সে দল এই ভদ্রলোককে জেলে ঢোকানোসহ অন্যান্য হয়রানিতে ফেলার জন্য দিয়ে বসতে পারে বিশেষ একটা মামলা। নকল যদি করা শুরু হয় বাকি অংশ নকলই হওয়ার কথা!