সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কারও কলমের খোঁচা কারও মরা-বাঁচা

ইকবাল খন্দকার

কারও কলমের খোঁচা কারও মরা-বাঁচা

কার্টুন : কাওছার আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

বছরখানেক আগের ঘটনা। রুমে বসে শুনতে পেলাম বাইরে খুব চেঁচামেচি হচ্ছে। বের হয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। দেখি ভ্যানে করে তরকারি বিক্রি করছে এমন একজনের সঙ্গে কোট-টাই পরা একজনের খুব তর্কাতর্কি হচ্ছে। তর্কাতর্কি তো না, চেঁচামেচি আরকি। আর চেঁচামেচিটা তরকারি বিক্রেতাই বেশি করছে। হঠাৎ এক পর্যায়ে তরকারিওয়ালা বলে উঠল, আমি পরিশ্রম কইরা ইনকাম করি। আপনের মতো ফাঁকিজুঁকি কইরা না। এবার কোট-টাই পরা ভদ্রলোক গেলেন ক্ষেপে। চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, এই বেয়াদব, আমি ফাঁকিজুঁকি করে ইনকাম করি মানে! তরকারিওয়ালাও দমে যাওয়ার পাত্র না। সে গলার ভলিয়ুম বাড়িয়ে বলল, হ, ফাঁকিজুঁকি কইরাই ইনকাম করেন। অফিসে কোনো কাম আছে আপনের? কাম তো খালি একটাই, নিজের নাম লেখা। এইটা কোনো কাম হইল? কোট-টাই পরা ভদ্রলোক এবার চুপ হয়ে গেলেন। কারণ, তিনি ভালোভাবেই বুঝতে পারলেন তরকারিওয়ালা মূলত তার সিগনেচারের কথা বলছে। ঠিকই তো, সারাদিন বসে বসে কাগজপত্রে সিগনেচার করা ছাড়া তো তার আর কোনো কাজ নেই। আর সিগনেচার করা মানেই তো নিজের নাম লেখা। তরকারিওয়ালার কথাটা চিন্তা করলে আপনিও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন, বেশিরভাগ মানুষেরই তেমন কোনো কাজ নেই নিজের নাম লেখা ছাড়া। সহকারীরা হয়তো কিছু কথাবার্তা টাইপ করে আনেন, তিনি শুধু টুক করে নিজের নামটা লিখে দেন। ব্যস, হয়ে গেল সিগনেচার, লেগে গেল তোলপাড়। ছোটবেলায় যখন পড়তাম ‘অসির চেয়ে মসি বড়’, তখন বেশ অবাক হতাম। তলোয়ারের সাইজ হচ্ছে দুই হাতের মতো, আর কলমের সাইজ আধ হাতও না। বড় হয়ে বুঝলাম কলমের কেরামতিটা আসলে কোন জায়গায়। আমার এক বড় ভাই সেদিন হাসতে হাসতে বললেন, মলমপার্টি আর কলমপার্টির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মলমপার্টি মানুষকে সর্বস্বান্ত করে চোখে মলম মেখে, আর কলমপার্টি মানুষকে সর্বস্বান্ত করে ছোটখাটো একটা খোঁচা মেরে। না, বড় ভাইয়ের কথায় মন খারাপ করার কিছু নেই। কারণ, তিনি কলমের মাধ্যমে যারা মতলববাজি করে, তাদের বুঝিয়েছেন। সবাইকে না। কলমের খোঁচায় মন্দ কাজ যেমন হয়, তেমনি ভালো কাজও হয়। তবে খোঁচা দিতে জানতে হবে। মানে ভালো কিছু লিখতে জানতে হবে, লেখার সদিচ্ছা থাকতে হবে। নইলে সেই কৌতুকের মতোই ঘটনা ঘটে যাবে। এক লোক ট্রেনে করে যাওয়ার সময় এক হকারের কথা শুনে খুবই চমকিত হলো। হকার বলছে তার কাছে যে কলম আছে, সেগুলো ব্যবহার করলে মুহূর্তেই লিখে লিখে পাতা ভরে ফেলা সম্ভব। লোকটা কলম কিনল এবং লেখার চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে হকারকে বলল, আমার ট্যাকা ফেরত দেও। তোমার কলম দিয়া লেখা যাইতাছে না। হকার অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, এমন তো হওয়ার কথা না। কিছুক্ষণ ভাবার পর সে লোকটাকে বলল, আচ্ছা, আপনি লেখাপড়া জানেন তো? লোকটা বলল, না। এত দাম দিয়া কলম কিনলাম, আবার লেহাপড়া জানতে হইব ক্যান? কলম হাতে ধইরা রাখলেই তো লেহা হইয়া যাওনের কথা। জি না, কলমের কোনো ক্ষমতা নেই লেখা তৈরি করার। লেখা তৈরি করতে হবে আপনাকেই। আর যে যত পাওয়ারফুল চেয়ারে থাকে, তার কলম তত পাওয়ারফুল কথাবার্তা লিখে থাকে। ট্রাম্প সাহেব পাওয়ারফুল চেয়ারে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তাই তার কলমও পাওয়ারফুল খোঁচা মারছে। আর সেই খোঁচায় কী পরিমাণ তোলপাড় হচ্ছে, সেটা সবাই কম বেশি জানেন। তবে কারো কারো জানার মধ্যে একটু ফাঁকফোকর রয়েই গেছে। যেমন আমার এক বন্ধুর মন্তব্য— ট্রাম্প এত বড় প্রেসিডেন্ট হয়েই সেকেলেই রয়ে গেল। আমি বললাম, কীভাবে বুঝলি? সে বলল, কীভাবে আবার! ট্রাম্প নাকি এখনো  কলমের খোঁচাই দেয়। অথচ আমি নিজেই ম্যালা বছর হয়ে গেল কলম দিয়ে লিখি না। যা লিখি কি-বোর্ডে। ট্রাম্প যেহেতু কলমের খোঁচা দিচ্ছে, তার মানে কি  তার কি-বোর্ড নষ্ট? নাকি কি-বোর্ডের লেখা আঙুলের ঘষায় মুছে গেছে?

সর্বশেষ খবর