সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিয়ে করতেই হবে

কাসাফাদ্দৌজা নোমান

বিয়ে করতেই হবে

রবিন বিয়ে করবে। ব্যাপারটা সে নানা উপায়ে বাসায় জানানোর পরও বাসা থেকে তেমন কোনো আগ্রহ দেখানো হয়নি। উল্টা বলা হয়েছে আরও আয় কর। সে বলেছিল, বিয়ের পর আরও আয় করলে কী আরও বিয়ে করতে পারব?

তার বিয়ে করার ব্যাপারটা পরিবারকে অনুধাবন করাতে হবে। কিন্তু কীভাবে? এই ব্যাপারে তার মনে পড়ল বিবাহিত বন্ধু কবীরের কথা। বাঘের বাচ্চা একটা! অনার্স থার্ড ইয়ারেই মেয়ে পটিয়েছে। তারপর বাবা-মাকে পটিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। অথচ সে না পেরেছে মেয়ে পটাতে, না পেরেছে বাবা-মাকে পটাতে। আগে যদি পটিয়ে রাখতে তাহলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না। ঠিক সময়ে না পটালে কপালে ফাটল ছাড়া আর কিছু জোটে না।

রবিনের সব কথা শুনে কবীর চেঁচিয়ে উঠল, না বন্ধু। এই পথে পা দিস না। আমি তোর এত বড় ক্ষতি চাই না!

: ক্যান?

: আমাকে বিশ্বাস কর। এই লাইনে আমার চার বছরের অভিজ্ঞতা। এইখানে ঢোকার পথ আছে বের হওয়ার পথ নাই। পুরাই আন্ডার ওয়ার্ল্ড।

: আমি আন্ডার ওয়াল্ডের ডন হবো!

রবিনের কথায় কবীর এইবার অট্টহাসি দেয়, ‘সবাই ভাবে ডন হবে, আসলে মাছি ভনভন। এইটা এমন এক আন্ডার ওয়ার্ল্ড যেইখানে কোনো পুরুষের ডন হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে নাই।’

: বাদ দে এসব। আগে বল তোর বিয়েতে আন্টি আংকেলকে কীভাবে ম্যানেজ করেছিস?

: আমি কিছুই ম্যানেজ করি নাই। আব্বা-আম্মা সমাজে তাদের মান ইজ্জত কোনোভাবে ম্যানেজ করেছে!

এই পর্যায়ে রবিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বড় বড় সফলতার জন্য প্রকৃতির সাহায্য লাগে। কিন্তু প্রকৃতি তো তার সঙ্গে নেই। সে ঠিক করে বাবার বরাবরে একটা আবেদনপত্র লিখবে। আবেদনপত্রে চাচা, মামার স্বাক্ষর থাকবে। প্রয়োজনে মানসিক ডাক্তারের একটা প্রেসক্রিপশন নীলক্ষেত থেকে ম্যানেজ করাও কোনো ঘটনা না। সেটা এটাচ করে দিতে পারলে বিয়ে না করিয়ে যাবে কই!

বিষণ্ন মনে রাস্তায় হাঁটছিল। হঠাৎ শফিকের সঙ্গে দেখা। তার মুখ খুশিতে চিকচিক করছে, বিয়ে ঠিক হয়েছে। বাবা-মা নাকি জোর করে তার বিয়ে দিচ্ছে। তার কোনো ইচ্ছাই নেই। কিন্তু কী করার? বাবা মায়ের কথার বরখেলাপ করবে না।

রবিন একটু থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল, ক্যান? ক্যান? তারা বিয়ের জন্য জোর করছে ক্যান?

: তাদের মনে হইছে এখন আমার বিয়ে করা দরকার।

‘লক্ষ্মী বাবা-মা’ ফিসফিস করে বলল রবিন।

: দোস্ত বিয়েতে কিন্তু আসতে হবে। ফ্রেন্ডরা সবাই আসবে। ব্যাচেলর পার্টি করব একটা। থাকবি কিন্তু।

: হ্যাঁ অবশ্যই থাকব।

এই বছরও বিয়ে খেয়ে খেয়েই কাটিয়ে দিতে হবে। প্রতি বিয়েতে ফুল বাবু সেজে যাবে, কিন্তু মূলবাবু আর সাজা হবে না। ছোটবেলায় বাবা-মা কথায় কথায় অমুক বন্ধু তমুক বন্ধুর উদাহরণ দিয়ে বলতো, ওরা কত লক্ষ্মী। বলার আগেই পড়ে। বাবা-মায়ের সামনে গিয়ে যদি বলা যেত, দেখেছেন শফিকের বাবা-মাকে। বলার আগেই বোঝে কিন্তু বলা হয় না।

এক দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে সে প্রতিদিন ঘরে ফিরে। অথচ ঘরে ফেরার কোনো আয়োজন নেই। চট করে মাথায় বুদ্ধি ধরে যায়। হ্যাঁ ঘরে ফেরা যদি অনিয়মিত করে দেয় তাহলে নিশ্চয়ই বাবা-মায়ের টনক নড়বে। ইয়েস!

পরের তিন দিন সে আর ঘরে ফিরল না। প্রথম দিন মা ফোন দিয়েছিল।

: হ্যালো তুমি কোথায়?

: বন্ধুর বাসায় আছি। ফিরব না।

: ঠিক আছে। যখনই ফের, ফেরার সময় একটা নারকেল তেল নিয়ে এসো।

 

দ্বিতীয় দিন আবার ফোন দিয়েছে।

: তুমি কোথায়?

: অফিস থেকে বন্ধুর বাসায় এসেছি। আজকেও ফিরব না।

: একবার এসে নারিকেল তেলটা অন্তত কিনে দিয়ে যেতে পারতা।

এই অবস্থায় রবিনের ভীষণ দুঃখ হয়। কয়েক লিটার নারিকেল তেল নিয়ে অচেনা কোথাও চলে যেতে ইচ্ছা করছে।

বাড়ি না ফেরায় তৃতীয় দিন তার ছোটবোন ফোন দিয়েছে।

: ভাইয়া তুমি কী আর আসবা না?

রবিন একটু রেগে গিয়েই বলছে, না আসব না।

: ইয়াহু! তোমার ক্যামেরাটা তাহলে আমার। থ্যাংকিউ ভাইয়া।

রবিনের মন খারাপ হয়। এই জীবন আর না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু  বিয়ে না করে অন্য কোনো সিদ্ধান্তেই আসা যাবে না। আগে বিয়ে তারপর সব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর