সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাউয়া কাহিনী

ইকবাল খন্দকার

কাউয়া কাহিনী

♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পাড়ার চা-স্টলে দেখা। দেখলাম তার মুখটা রীতিমতো কালো। জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে বড় ভাই? মন খারাপ কেন? বড় ভাই বললেন, তুই তো জানিস আমি একটু-আধটু কবিতা লিখি বলে তোর হবু ভাবীর দ্বারা কতটা নির্যাতিত হই। সে কথায় কথায় একটা খোঁচাই দেয়— ঢাকা শহরে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি। আমি বললাম, এসব তো পুরনো কথা। এখানে আপনার নতুন করে মন খারাপ করার কী আছে? বড় ভাই বললেন, সম্প্রতি জানা গেছে দলে দলে নাকি ‘কাউয়া’ ঢুকেছে। অতএব, বুঝতে হবে দেশে কাকের সংখ্যাই বেশি। কীভাবে বেশি? নরমাল কাক তো আছেই, আর কিছু আছে কাউয়ারূপী কাক। মানে যেগুলো দলে দলে ঢুকেছে আরকি। তো দুই প্রকারের কাক মিলে যে পরিমাণ কাক হয়েছে, তাতে এটা হলফ করে বলা যায়, কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি না, বরং কবির চেয়ে কাকের সংখ্যা বেশি। এই অবস্থায় আমরা মানে কবিরা ‘সংখ্যালঘু’ হয়ে গেলাম না? আমার এক বন্ধু সেদিন উড়ে এসে জুড়ে বসা নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা বলছিল। আমরা মনোযোগী শ্রোতা হয়ে তার এইসব ভারি ভারি কথা শুনছিলাম আর ফাঁকে ফাঁকে হাঁই তুলছিলাম। একপর্যায়ে সে বলল, বুঝলি, সবার পক্ষে কিন্তু উড়ে আসাও সম্ভব হয় না, জুড়ে বসাও সম্ভব হয় না। জুড়ে যে বসবে, তার আগে তো উড়ে আসতে হবে। এই ক্ষমতাটাই তো সবার থাকে না। আমরা তার কথার মধ্যে একটু জটিলতার আভাস পেয়ে বললাম, উড়ে আসার জন্য আবার বিশেষ কোনো ক্ষমতার দরকার হয় নাকি? বন্ধু বলল, অবশ্যই ক্ষমতার দরকার হয়। তুই যে উড়বি, কীভাবে উড়বি, বিমানে চড়তে হবে না? আর বিমান ভাড়া কি কম? বলেই সে দাঁত কেলাল এবং হাসতে লাগল। আমরা নিশ্চিত হলাম সে উড়ে আসা বলতে বিমানযোগে আসাকে বুঝিয়ে রসিকতা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু না, যারা উড়ে এসে জুড়ে বসার চেষ্টা করে, তাদের বিমান দিয়ে না এলেও চলে। একটু কৌশল জানলেই হয়। আরে বাপুরে, ‘কাউয়া’ সাজতে তো আর বেশি কিছু লাগে না। আপনার রং যা-ই হোক না কেন, আলকাতরার ড্রামে একটা ডুব দেবেন আর দেখবেন আপনি হয়ে গেছেন কমপ্লিট একটা ‘কাউয়া’। ব্যস, এবার ঢুকে পড়ুন যে কোনো দলে। কায়দা মতো লুটুন ফায়দা। পদ্ধতি তো শিখিয়ে দিলাম। এখন দেখা যাবে প্রবাদ উল্টে গেছে। আগে বাঙালি মাগনা পেলে আলকাতরা খেত, আর এখন কাউয়া সাজার জন্য আলকাতরার ড্রামে ডুব দেবে। তবে এখানে কিন্তু একটা ভয়ের ব্যাপারও আছে। নকল ‘কাউয়া’ মানে রং মেখে কাউয়া সাজলে কিন্তু একটু বুঝে শুনে চলতে হবে। কারণ, গায়ে একটু পানি লাগলে যদি রং চলে যায় আর আসল চেহারা ধরা পড়ে যায়, তাহলে কিন্তু খবর আছে। আমার প্রতিবেশী বললেন, এর আগে অনেকবার চিড়িয়াখানায় গেছি। ভেবেছিলাম আর কখনো যাব না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আবার যাওয়া উচিত। আমি বললাম, কেন বলেন তো! প্রতিবেশী বললেন, আগে শুনতাম কাক নাকি ময়ূর সাজতে চায়। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আমি নিশ্চিত ময়ূররা কাক সাজা শুরু করবে। তাই চিড়িয়াখানায় গিয়ে ময়ূরের খাঁচার সামনে দাঁড়াব এবং খেয়াল করব সত্যি সত্যিই ময়ূরেরা কাক সাজার জন্য মেকাপ-টেকাপের ব্যবস্থা করেছে কিনা। আমার এক দুলাভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, বলেন তো মানুষ উড়ে এসে জুড়ে বসে কেন? জুড়ে বসা ছাড়া কি মানুষের কোনো কাজ নেই? দুলাভাই বললেন, জুড়েই তো বসবে। ‘জুড়ে’ না বসে ‘জোরে’ বসলে সোফার পায়া ভেঙে যাবে না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর