সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

এ প্লাস কিংবা মশাকথন

ইকবাল খন্দকার

এ প্লাস কিংবা মশাকথন

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

ভাবীর মন খারাপ। ভয়ে ভয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলাম। জানা গেল তার ছেলে এ প্লাস পেয়েছে, তাই তিনি মনে আঘাত পেয়েছেন। মোটামুটি জটিল আঘাত। ভাগ্য ভালো বলেই সেটা হার্ট অ্যাটাকের পর্যায়ে যায়নি। আমি বললাম, মানুষ এ প্লাস পেলে খুশি হয়। আর আপনি মনে আঘাত পেয়েছেন। কারণটা কী বলেন তো! ভাবী বললেন, কারণ আবার কী। আমি নিশ্চিত ছিলাম এ প্লাস পেলে আমার ছেলের ছবি পত্রিকায় আসবে। একক ছবি আসবে, সেটা আশা করিনি।

তবে দলীয় ছবিতে সে থাকবে, এ ব্যাপারে কনফার্ম ছিলাম। তার স্কুলে পত্রিকার ফটো সাংবাদিকরা গেছেন, এই খবরও আমার কানে এসেছিল। চিন্তা করতে পারবেন না ব্যাপারটা নিয়ে আমি কতটা উচ্ছ্বসিত ছিলাম। আমি বললাম, একটা গ্রুপ ছবিতে নিজের ছেলেও থাকবে, এটা তো খুব বড় কোনো চাওয়া না। আর এটা পূরণ না হওয়ার মতো কোনো চাওয়াও নয়। ভাবী বললেন, কিন্তু এটাই সত্য যে, এই চাওয়াটাও পূরণ হয়নি। কেন পূরণ হয়নি জানেন? কারণ, আমার ছেলের স্কুল থেকে এত বেশি ছেলেপুলে এ প্লাস পেয়েছে, ফটো সাংবাদিকের পক্ষে সবাইকে এক ফ্রেমে এনে ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। ধাক্কাধাক্কি করতে গিয়ে আমার ছেলেটা হালকা আহত হয়েছে। এত করে ওকে বলতাম ঠিকমতো মাছ-মাংস খা। তাহলে গায়ের শক্তি বাড়বে। যদি সে আমার কথা শুনত, তাহলে আজ যে সবাইকে ধাক্কিয়ে এক সাইডে নিয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে পারত না বলেন! সবই আমার কপাল। ভাবীর যতই হা-হুতাশ করেন না কেন, এটা সত্য যে, এখন এ প্লাসের বাম্পার ফলনটা খানিকটা কমে এসেছে। এই বিষয়ে আমার এক দুলাভাইয়ের মন্তব্য— এ প্লাসের সংখ্যা কমে আসছে, এটা একদিক দিয়ে খুব ভালো। বিশেষ করে এখন যে বাজে সময় যাচ্ছে, এ প্লাস কম পাওয়াই ভালো। আমি অবাক হয়ে বললাম, এখন এমন কী বাজে সময় যাচ্ছে, যেটার কারণে এ প্লাস কম পাওয়া ভালো? দুলাভাই বললেন, ঢাকা শহরের বেশির ভাগ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত না? চিকুনগুনিয়া হলে গিরায় গিরায় কী পরিমাণ ব্যথা হয়, জানা আছে? তো ছেলেমেয়েগুলো যদি এ প্লাস পাওয়ার পর হাঁটু বা কোমরের ব্যথার কারণে খুশিতে ঠিকঠাক মতো না-ই নাচানাচি করতে পারে, তাহলে এর চেয়ে ভালো না এ প্লাস না পাওয়া? খেয়াল করার মতো ব্যাপার হচ্ছে, এ প্লাসের বাম্পার ফলনে খানিকটা মন্দাভাব পরিলক্ষিত হলেও মশারা যে চিকুনগুনিয়া ফলিয়ে যাচ্ছে, সেখানে কিন্তু কোনো মন্দাভাব নেই। জোর দিয়ে বলা যায়, মশাদের চিকুনগুনিয়ার ফলন বাম্পার থেকে বাম্পারতর হচ্ছে। তবে এটা নিয়ে মশা সমাজে কোনো উচ্ছ্বাস কিংবা মিষ্টি বিতরণের রেওয়াজ চালু আছে কি না, আমাদের ঠিক জানা নেই। আমার এক ছোটভাই বলল, নিজেদের সাফল্যের কারণে মশারা আর যা-ই করুক, মিষ্টি বিতরণের দিকে মনোযোগ দেবে না। আমি জানতে চাইলাম, কেন? ছোটভাই বলল, কেন আবার। যদি মিষ্টির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়! আঙ্গুলের আগা দিয়ে চাপ দিয়েই যারা সহ্য করতে পারে না, তারা মিষ্টির নিচে চাপা পড়লে ভর্তা হয়ে যাবে না? জি, মশারা নাজুক প্রাণীই বটে। আঙ্গুলের চাপ কিংবা হাতের থাপ্পড় ভালোভাবে লাগার আগেই খতম। তবে খতম হওয়ার আগে, মেশো মশাই খতম হওয়ার আগে উনারা যে দাপটটা দেখায়, এই দাপট আপনার আমার পক্ষেও দেখানো সম্ভব না। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, মশার দাপট কিন্তু আসলেই সাংঘাতিক। পরশুদিন সেটা ভালোভাবে টের পেলাম।

আমি বললাম, কীভাবে? প্রতিবেশী বললেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসেছিল মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য। তো যে মেশিনটা দিয়ে ওষুধ ছিটাচ্ছিল, সেই মেশিনের সে কী আওয়াজ! মনে হচ্ছিল কানের পর্দা ফেটে যাবে। আমি করলাম কী, তাড়াতাড়ি করে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে ফেললাম। অথচ একটা মশাকেও কানে আঙ্গুল ঢোকাতে দেখলাম না। তাহলে কার দাপট বেশি?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর