‘অ্যাপের চাপে সিএনজি’— কথাটা শুনে অনেকেরই পিলে চমকে যেতে পারে। ভাবতে পারেন সিএনজিকে চাপে ফেলতে পারে, এমন বাপের বেটা তথা জিনিস এ দুনিয়ায় আবিষ্কার হয়েছে নাকি? বরং সিএনজিই তো সবাইকে চাপে রাখে। সুতরাং ‘অ্যাপের চাপে সিএনজি’ না বলে ‘সিএনজির চাপে পুরো জাতি’ এ কিসিমের একটা শিরোনাম হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে দিন বদলেছে। হাতের স্মার্টফোনের সাইজ দেখেই নিশ্চয়ই সেটা বুঝতে পারছেন। সেই স্মার্টফোনের ভিতরেই হাজির হয়েছে অ্যাপ। আপাতত বলা যায়, চাপ সৃষ্টিকারী একটা বস্তু হচ্ছে অ্যাপ। সিএনজিওয়ালাদের দ্বারা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ হয়রানির শিকার হননি এমন যাত্রী আপনি অন্তত ঢাকা শহরে খুঁজে পাবেন না। একটা সময় ছিল তাদের ভাব দেখলে অনেকেরই মনে পড়ে যেত আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কথা। অবশ্য প্রেসিডেন্ট সাহেবও এত ভাব নেন কিনা এটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। তো তাদের ভাব খানিকটা কমল যখন মিটার সিস্টেম চালু হলো। তবে এখানেও কিন্তু তাদের নিজস্ব একটা আইন কায়েম হয়ে গিয়েছিল। আইনটা কী? মিটারের ওপর বিশ টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমার এক বন্ধুর অভিমত— বিশ টাকার নোট দেখলেই নাকি তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সিএনজিওয়ালাদের মুখ। তার কথা হচ্ছে, নরমাল টাকার গায়ে ‘চাহিবামাত্র উহার বাহককে... টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে’ কথাটি লেখা থাকলেও বিশ টাকার নোটের গায়ে নাকি লেখা থাকা উচিত— ‘চাহিবামাত্র সিএনজিওয়ালাকে মিটারের উপর বিশ টাকা বাড়িয়ে দিতে বাধ্য থাকিবে’। তো মিটার সিস্টেম চালু হওয়ার পরও সিএনজিওয়ালাদের তালবাহানার সীমা ছিল না। এ অসীম তালবাহানায় সীমারেখা টেনে দেওয়ার জন্য এসেছে অ্যাপ। এ খুশিতে আমরা বলতেই পারি— ল্যাও ঠেলা। সিএনজিওয়ালাদের জন্য অ্যাপের ঠেলা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অনেকেই বলাবলি করছেন। কেউ কেউ বলছেন, এখন শুধু মিটার কেন, সিএনজিওয়ালারা সেন্টিমিটারে যেতেও প্রস্তুত থাকে। যারা দিন দিন অন্যের পকেটের বারোটা বাজিয়ে আসছেন তারা সাবধান। কারণ সিএনজিওয়ালাদের হয়রানি যেহেতু উপযুক্ত বিহিত হতে পেরেছে, অতএব আপনাদের বিহিত হওয়াও কিন্তু সময়ের ব্যাপার। আমার এক বন্ধু বলল, ঘরোয়া কোনো অ্যাপ চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি? আমি বললাম, ঘরোয়া অ্যাপ বলতে? বন্ধু বলল, না মানে, এই যে তোর ভাবীকে টিভির রিমোটটা আমার হাতে দিতে বলতেই সে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয় এবং বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দেয়, এটা প্রতিহত করার যদি কোনো অ্যাপ বের হতো। খুব যন্ত্রণায় আছিরে দোস্ত।
আমি বললাম, যারা অকারণে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দেয় তাদের জন্য আরও আগেই অ্যাপ চলে এসেছে। অ্যাপটা হচ্ছে, ফেসবুক ঘেঁটে সুন্দরী কোনো মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলতে হবে, তুমি বাপের বাড়ি চলে গেলে কিন্তু ওকে বাসায় লাঞ্চের দাওয়াত দেব। ব্যস, বউ বাপের বাড়ি যাওয়ার নামও মুখে নেবে না। আমার এক প্রতিবেশী বলল, বাড়িওয়ালার জ্বালাতন বন্ধের কোনো অ্যাপ কি বাজারে আসতে পারে? আমি বললাম, বাড়িওয়ালার জ্বালাতন বন্ধের অ্যাপ হচ্ছে লেপ। মানে বাড়িওয়ালার আভাস পেলেই লেপমুড়ি দিয়ে ঢুকে যাবেন খাটের তলায়। ব্যস।