সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঋণ নিয়ে চিরঋণী

পাশ থেকে একজন বলল, সব রোগই সারানোর উপায় আছে। আর আপনি যে বললেন ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়াটা একটা রোগ, এ রোগ সারানোরও উপায় আছে...

ইকবাল খন্দকার

ঋণ নিয়ে চিরঋণী

♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

তার নাম কাকা। না, আমার চাচা-কাকা না। তার নামই কাকা। ব্রাজিলের ফুটবলার কাকার নামানুসারে তার নাম রাখা হয়েছে এমনটা ভাবার কারণ নেই। সত্যি বলতে হয়েছে কি, তাকে কাকা-কাকা ডাকতে ডাকতে তার নাম ভুলে গেছি। তো, কাকার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন জানা গেল তিনি নাকি ঋণখেলাপি করেছেন। তার বাড়ি-গাড়ি-জমিদারি সবই এখন ব্যাংকের। এ দুঃসহনীয় দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখেই হয়তো গুণীজনে বলেছেন, ‘কাল যা ছিল, আজ তা তোমার হয়েছে। আজ যা আছে আগামীকাল তা অন্যের হবে।’ বয়স যখন কম ছিল তখন ভেবেছিলাম কথাগুলো বোধহয় প্রেমিকাসংক্রান্ত কিছু একটা। কাকার বাড়ি-গাড়ি-জমিদারি সবই ব্যাংকের হাতে চলে যাওয়ার পর বুঝলাম, বিষয়টা প্রেমিকাসংক্রান্ত কিছু নয়। সে যাই হোক, ঋণখেলাপি কাকাকে দেখতে বেরিয়েছি। পথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম তার সঙ্গে দেখা হলে কী কী সান্ত্বনা বাণী দেওয়া যায়। শুরুতেই বলব, বন্ধু টেনশন নিও না, আমি তো আছি। যা গেছে যাক। আবার হবে... এসব ভাবতে ভাবতে কাকাকে পেয়ে গেলাম মোড়ের চা দোকানে। আমাকে দেখেই ৬০ ওয়াট বাতির পাওয়ারসমৃদ্ধ হাসি দিয়ে কাকা বলল, ভাতিজা টেনশন নিও না, আমি তো আছি। যা গেছে যাক। আবার হবে...

আমি চমকে ওঠে বললাম, মানে? কাকা বলল, আরে ঋণ নিছিলাম ১০ কোটি। আমার বাড়ি-গাড়ি-জমিদারির বর্তমান বাজার মূল্য এক কোটিও হবে না। পুরাই লাভ! হা হা হা...। বুঝলাম, ঋণখেলাপিদের নিয়ে ভেবে লাভ নেই। তারা লাভেই আছে। কতিপয় হায় হায় কোম্পানি ঋণখেলাপির তালিকায় তুঙ্গে অবস্থান করছে। তারা বিরাট জমজমাট ভাব নিয়ে বাজারে আসছে, অতঃপর কোটি কোটি টাকা ঋণ করছে, এরপর গায়েব। এ ব্যাপারে আমার এক চাচার দামি কথা, ছোট সময় আমারে নিয়া আমার আব্বায় যখন বাজারে যাইত, তখন করত কি, কোমরে চিকন দড়ি বাইন্ধা রাখত। দড়ির এক মাথা থাকত আব্বার হাতে। যখনই হারায়া যাওয়ার অবস্থায় পইড়া যাইতাম, তখনই মারত দড়ি ধইরা টান। আমি আর হারাইতাম না। আমি মনে করি হায় হায় কোম্পানির হর্তাকর্তারা যখন ঋণ আনতে যায়, তখনই তাগো কোমরে দড়ি বাইন্ধা দিতে হইব। যাতে পরে আর গায়েব হইয়া না যাইতে পারে। যাতে দরকার হইলেই দড়ির আগায় ধইরা খিইচ্চা টান দিওন যায়। আমার এক বড় ভাই বলল, ঋণ নিয়ে মানুষ ঋণ ফেরত দেয় না। এটা একটা রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রোগ সারানোর কোনো উপায় দেখছি না। পাশ থেকে একজন বলল, সব রোগই সারানোর উপায় আছে। আর আপনি যে বললেন ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়াটা একটা রোগ, এ রোগ সারানোরও উপায় আছে। তবে দরকার ভালো হাসপাতাল। আমি বললাম, হাসপাতাল তো প্রচুর আছে দেশে। লোকটা বলল, এসব হাসপাতালে চলবে না। ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার রোগটা যেহেতু অত্যন্ত জটিল, তাই অবশ্যই আধুনিক হাসপাতাল লাগবে। একশ কোটি টাকা হলেই এমন একটা হাসপাতাল তৈরি করা সম্ভব।

আমি আকাশ থেকে পড়ে বললাম, একশ কোটি টাকা? এত টাকা কোথায় পাবেন? লোকটা দাঁত কেলিয়ে বলল, কেন, ঋণ করব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর