সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

গরম গরম শীত

ইকবাল খন্দকার

গরম গরম শীত

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড় ভাই বললেন, যাই বলিস ছোটভাই, শীতের কিন্তু আলাদা একটা ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতা অন্য কোনো জিনিসের নেই। গরমের তো নেই-ই! তুই বিশ্বাস করবি না, শীতের এই ক্ষমতার কারণে আমি কত বড় রকমের উপকার পেয়েছি। আমি বললাম, আপনি বলেন। বিশ্বাসযোগ্য করে বলতে পারলে অবশ্যই বিশ্বাস করব। বড়ভাই বললেন, যখন থেকে হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে, তখন থেকে আমার সংসারে শান্তি ফিরে এসেছে। অথচ এর আগে কী অশান্তিই না ছিল। শীতের ক্ষমতাটাই আসলে অন্যরকম। আমি বললাম, আপনি তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কেবল একই কথা বলছেন। আসল কথাটা একটু বলেন শুনি। বড়ভাই বললেন, আমি কেন সারা দিন ল্যাপটপে ফেসবুক দেখি, এ নিয়ে তোর ভাবী ক্যাচরম্যাচর করতেই থাকত আর করতেই থাকত। তার ক্যাচরম্যাচরে অতিষ্ঠ হয়ে আমি করতাম কী, ল্যাপটপ নিয়ে চলে যেতাম বারান্দায়। সেখানে গিয়েও সে ক্যাচরম্যাচর করত। সে এক মহাযন্ত্রণা। কিন্তু যেই কড়াভাবে শীত পড়ল, এই যন্ত্রণার অবসান ঘটল। এখন আমি বেডের ওপর বসে সারা দিন ল্যাপটপে ফেসবুক দেখি। এতে তোর ভাবী ক্যাচরম্যাচর তো করেই না, বরং খুশিতে বাকবাকুম করতে থাকে। আমি বললাম, এটা কীভাবে সম্ভব? বড়ভাই আসল গোমর ফাঁস করলেন, হয়েছে কী, অতিরিক্ত শীতের কারণে লেপ, কম্বল, বালিশ সব বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে থাকে তো, তাই তোর ভাবী বলে আমি যাতে লেপ বা কম্বলের ওপর রেখে, বিশেষ করে বালিশের ওপর রেখে মানে ল্যাপটপ রেখে ফেসবুকিং করি। যত বেশি সময় ধরে ফেসবুকিং করব, তত বেশি গরম হবে ল্যাপটপ আর তত গরম হবে লেপ, কম্বল, বালিশ। ব্যস, উমটাও বেশি হবে। আমার এক বন্ধু রাজনীতি নিয়ে ভালোই চিন্তাভাবনা করে। তাকে বললাম, আগে তো শীতকালে রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠত। আর রাজনীতির গরমে শীত পালাত। এখন এ অবস্থা কেন? বন্ধু বলল, একটা কথা প্রায় প্রবাদবাক্যের সমমর্যাদায় আসীন হয়ে গেছে। কথাটা কী? কথাটা হচ্ছে, ঈদের পরে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। তার মানে কী? মানে হচ্ছে, আন্দোলনের জন্য একটা ঈদ খুব জরুরি। যেহেতু ঈদ এখনো অনেক দূরে, তাই আন্দোলনও ম্যালা দূরে। সুতরাং এখন ঠাণ্ডা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার পরিচিত এক রাজনীতিবিদ আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, শীত চলে যাচ্ছে, অথচ আপনারা আন্দোলনে নামছেন না। কারণটা কী? রাজনীতির উত্তাপ ছাড়া তো এই শীত কমবে না। ভদ্রলোক বললেন, আসলে আমরা আন্দোলন তো করতেই চাই। কিন্তু এই শীতের মধ্যে রাজপথে নেমে মিছিল করতে গেলে সবার মুখ দিয়ে যে পরিমাণ ধোঁয়া বের হবে, এই ধোঁয়ার কারণে রাস্তাঘাট ঘোলাটে হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আমরা... আমি ভদ্রলোককে কথা শেষ করার সুযোগ দিতে পারলাম না।

কারণ, আমার একটা ফোন এসেছে। রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম, কীরে, তোদের দিকে শীত কেমন? ওপাশ থেকে জবাব এলো, খুবই শীত। আমার তো গ্যাস্ট্রিক বেড়ে গেছে। আমি বললাম, শীত বেশি থাকলে গ্যাস্ট্রিক বাড়ে, এমন আজগুবি কথা তো জীবনেও শুনিনি। ওপাশ থেকে বলল, আসলে হয়েছে কী, ডাক্তার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়ে বলেছিলেন তিনবেলা খাওয়ার জন্য।

কিন্তু আমি খেতে পারছি না। কারণ, শীতের কারণে পানির ধারেকাছেও যেতে পারছি না। আর পানির ধারেকাছে যেতে না পারলে ওষুধটা খাব কী দিয়ে? ওষুধ তো আর গরম চা দিয়ে খাওয়ার নিয়ম নেই। ঠিক কিনা? আমার এক চাচা বললেন, ভালো একটা দাওয়াই পাইছি ভাতিজা তোর চাচি আমার সঙ্গে উল্টাসিধা করতে চাইলেই আমি দাওয়াইটা প্রয়োগ করি। সঙ্গে সঙ্গে সে সিধা হয়ে যায়।

আমি বললাম, দাওয়াইটা কী, একটু জানতে পারি? চাচা বললেন, তোর চাচি আমার লগে ঝগড়াঝাটি করতে চাইলেই আমি তারে ঘরে ঢোকায়া এসি ছাইড়া দিয়া রিমোট নিয়া বাইর হইয়া যাই। ব্যস, দুই মিনিটে সে সিধা।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর