শিরোনাম
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মশার সংগীতচর্চা

ইকবাল খন্দকার

মশার সংগীতচর্চা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

আমার এক ছোটভাই ম্যালাদিন ধরে লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু বিশেষ কোনো সুবিধা করতে পারছে না। এই কারণে তার মধ্যে বিস্তর হতাশা। কারণে-অকারণে যার-তার সঙ্গে রাগ করে বসে, চিৎকার-চেঁচামেচি করে। গতকাল যখন তার সঙ্গে দেখা হলো, তখনো দেখি মুড ব্যাপক খারাপ। জানতে চাইলাম, নতুন করে কিছু হলো নাকি? ছোটভাই বলল, না, নতুন করে আর কী হবে! ঘটনা পুরনোই। তবে আজকে সাংঘাতিকরকম মেজাজ খারাপ হয়েছে মশাদের ওপর। থাপড়াতে থাপড়াতে একদম হাত ব্যথা বানিয়ে ফেলেছি। মশা যদি কাঁচা খাওয়ার নিয়ম থাকত, তাহলে আজ কমপক্ষে একশ মশা পানি ছাড়া গিলে খেয়ে ফেলতাম। আমি বললাম, তুই ক্রিয়েটিভ মানুষ। এত উত্তেজনা তোর ক্ষেত্রে শোভা পায় না। তুই লেখালেখি নিয়ে আছিস, লেখালেখি নিয়েই থাক। ছোটভাই বলল, আরে বাপুরে, লেখালেখির কারণেই উত্তেজনা। আমি এতদিন ধরে লিরিক লিখছি, আর মশা কানের কাছে এসে এত গান শোনাতে পারে, তাহলে আমার লিরিক নিয়ে একটা মৌলিক গান বানাতে সমস্যা কী! মিউজিক ভিডিও বানানোর খরচ না হয় আমি দেব। ছোটভাইয়ের কথা শুনে বুঝলাম তার মাথার নাটবল্টু ভালো করেই ঢিলা হয়েছে। তাই আর কথা বাড়ালাম না। চলে গেলাম নিজের কাজে। কিন্তু কাজ করব কী, কানের কাছে মশারা এমনভাবে সংগীত শুরু করে দিল, আমি রীতিমতো পাগল হওয়ার পর্যায়ে চলে গেলাম। পিয়নকে বললাম মশা তাড়ানোর স্প্রে দেওয়ার জন্য। পিয়ন তার বত্রিশ দাঁতের প্রায় সবগুলো বের করে বলল, স্যার, আপনে তো রোজই কাজ শুরু করার আগে কম্পিউটারে গান ছাইড়া লন। আপনের কাজও চলতে থাকে, কম্পিউটারে গানও চলতে থাকে। আজকা না হয় কম্পিউটারের গান না শুইনা মশার গান শুনলেন। এতে কারেন্টও খরচা হইল না। ঠিক আছে না? আমার এক প্রতিবেশী বলল, সিটি করপোরেশন খুব চেষ্টা করছে মশা নিধনের জন্য। কিন্তু পারছে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, কোনোদিন পারবেও না। আমি মনে করি, সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের উচিত ভিন্ন পথে অগ্রসর হওয়া। অর্থাৎ মশা নিধনের ব্যর্থ চেষ্টা না করে এমন কিছু করা, যাতে মশারা কানের কাছে এসে যে গানটা শোনায়, এই গানটা অসহ্য না লেগে সহনীয় পর্যায়ে থাকে আরকি। মানে মশাকে যদি একটু সংগীতের তালিম দেওয়া যায়। অন্তত সারেগামাপাধানিসাটা...

আমার এক দুলাভাই বললেন, মশারা সংগীতচর্চা করে, সেটা ঠিক আছে। তবু আমি মনে করি মশাদের সংগীতচর্চাটা অত্যন্ত আত্মঘাতী। মানে তারা খুবই রিস্ক নিয়ে সংগীতচর্চা করে থাকে। একটু এদিক-সেদিক হলেই লাইফ কাবার। আমি বললাম, এত আধ্যাত্মিক কথা না বলে একটু যদি বুঝিয়ে বলতেন কী বলছেন। মশা সংগীতচর্চা করে, এখানে আত্মঘাতী, রিস্ক— এইসব শব্দ কেন আসবে? সংগীত তো অত্যন্ত নরম, কোমল একটা ব্যাপার। এটা ক্রিয়েটিভিটির বিষয়। প্রতিবেশী বলল, আপনি যদি আমার কথাটা একটু বুঝতে চেষ্টা করতেন, তাহলে এত প্যাঁচানোর দরকার পড়ত না। শোনেন, গান শুনে মানুষ কী করে? হাততালি দেয়। এবার চিন্তা করে দেখেন, মশার গানে সন্তুষ্ট হয়ে যদি হাততালি দেওয়া হয়, তাহলে একবারের হাততালিতে মশাদের কয়টা লাশ পড়বে! ব্যাপারটা আত্মঘাতী না?

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর