শিরোনাম
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

একটি ত্রিমুখী গল্প

একটি ত্রিমুখী গল্প

প্রসঙ্গ ১

বাড়ি থেকে বাইরে কোথাও বের হলে পেপার কেনার নেশাটা প্রখর। হকার দেখলেই মন চায় পত্রিকা কিনি। সেদিন যশোর থেকে ফিরছিলাম তো ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম যে, সেদিন তিনটা পত্রিকায় আমার লেখা এসেছে। তাই তো তিনটা পত্রিকা কিনেছিলাম।

গাড়ির ভিতরে বসে আছি। হঠাৎ পেছন থেকে মুখে মাস্ক করা কোনো এক ভদ্রলোক আমার মাথায় টোকা দিয়ে বললেন, ভাই আপনি কি পেপার বিক্রি করেন? খানেকক্ষণ চুপ মেরে থেকে আমি বললাম হ্যাঁ, ভাইজান। তবে আপনি নিলে একটা নিতে পারেন পড়তে। আমার এই কথা শুনে তিনি চোখ-মুখ-নাক-মাথা কোনোটিই নাড়ালেন না। আমি মনে মনে ভাবলাম বোধ হয় লজ্জায় হ্যাঁ-না কোনোটিই বলছেন না। তাই তো ব্যাগ থেকে একটা পেপার নিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিতেই মাথা নেড়ে তিনি জানালেন ‘না’। এ থেকে কি বোঝা যায়,

ফ্রি পাইলে বাঙালি আলকাতরা খেলেও ফ্রিতে কেউ পেপার পড়তে চায় না (কিনে পড়তে চায়)।

প্রসঙ্গ ২

সেদিন চুড়িপট্টিতে একটা অ্যাকুরিয়াম দেখতে গিয়েছিলাম। কিনতে নয়। ওই দোকানে দেখলাম এক ভদ্রলোক তার সুন্দরী বউয়ের জন্য সাজুগুজুর জিনিস কিনছেন। দোকান থেকে এটা নিচ্ছেন, ওটা নিচ্ছেন, বউয়ের কানে ধরছেন, নাকে ধরছেন, চোখে ধরছেন আর খুশিতে গদগদ হয়ে বলছেন এটায় তো তোমাকে দারুণ লাগছে। ওটাতে তোমাকে বিশ্বসুন্দরীর মতো লাগছে। এমন সময় দোকানের এক সেলসম্যান তার আঠারো পাটি দাঁত বের করে বললেন, ভাবী, আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে। আপনার যেটা খুশি সেটা নিন। আপনি খুব সুন্দর ফিগারের তো, তাই যেটা নেবেন সেটাই ম্যাচ করবে আপনার।

মুহূর্তের মধ্যে ভদ্রলোকটির চাঁদমুখটা অমাবস্যার মতো অন্ধকার হয়ে গেল। আড় চোখে সেলসম্যানের দিকে তাকাতে তাকাতে কোনো কিছু না কিনেই বউকে নিয়ে বের হয়ে গেলেন।

এ থেকে কি বোঝা যায়—

বউয়ের চেহারা সুন্দর হওয়াও কম যন্ত্রণার নয়।

প্রসঙ্গ ৩

দুই মামাতো ভাই এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। মামী নার্সের চাকরি করেন। আর মামা কোম্পানির লোক। মামাতো ভাই দুটো আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ফাঁকিবাজ। পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়ার তো প্রায় হাজারখানেক ফর্মুলা ওদের দুই ভাইয়ের নখদর্পণে। পড়তে বসলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ২০-২৫ বার তাদের টয়লেটেই যাওয়া লাগে। পানি খেতে অন্য রুমে যায় আরও কয়েকবার। ওদের এমন অবস্থা দেখে মামী কড়া আইন করেছেন, পড়তে বসলে আর উঠা যাবে না কোনোভাবেই। মামীর এই আইন প্রণয়নের প্রথম দিনেই ঘটল এক বিরাট ইতিহাস। ছোটজনের অবদানে ফ্লোরটা হয়ে উঠেছিল সুইমিং পুল। আর বড়টা মানে যেটা মটকু, কাপুড় নষ্ট যেমন-তেমন পুরা ফ্লাটে এমন দুর্গন্ধ বানিয়ে ফেলেছিলেন যে, বোঝাই মুশকিল হয়ে পড়েছিল কোনটা বেডরুম আর কোনটা বাথরুম।

এ থেকে কি বোঝা যায়—

আইন-কানুনেরও একটা সিলেবাস থাকার দরকার আছে।

 

এস আর শানু খান

মনোখালী, শালিখা, মাগুরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর