কিছুদিন আগে একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কী করেন? তিনি জবাব দিলেন, খাই। আমি বললাম, এই মুহূর্তে কী করছেন, সেটা জানতে চাচ্ছি না। আমি জানতে চাচ্ছি সবসময় কী করেন। মানে আপনার পেশা কী। ভদ্রলোক আবারও বললেন, খাই। এবার মেজাজ একটু খারাপ করলাম। বললাম, আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না? আমি আপনার পেশা জানতে চাচ্ছি। মানে পেশাগতভাবে আপনি কী? ভদ্রলোক বললেন, পেশাগতভাবে আমি খাদক। আর যে কোনো পেশাজীবীর চেয়ে আমি বেশি সময় দিই আমার পেশায়। যেমন ধরেন কেউ চাকরি করে। সে কয় ঘণ্টা চাকরি করে? সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা। আর আমি আমার পেশার ক্ষেত্রে কোনো টাইম-টেবল মেনটেইন করি না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যে শুরু হয় আমার খাওয়া, শেষ হয় গভীর রাতে ঘুমানোর সময়। তবে আরেকটা তাজ্জব ব্যাপার কী জানেন, আজকাল আমি ঘুমানোর পরও খাই। মানে স্বপ্নে। এই তো গতরাতেও পোলাও খেলাম। সঙ্গে বোরহানি ছিল। এই ভদ্রলোকের মতো আরও অনেক ভদ্র বা অভদ্রলোক পাবেন, যারা অলটাইম খাওয়ার ওপরে থাকে। অবশ্য এই খাওয়া কেবল ভাত, পোলাও, কোর্মা, বিরানি ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে এমন কেউ কেউ আছে, যারা আরও কিছু খায়। যেমন ওইদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শুনছিলাম একজন আরেকজনকে হুমকি দিচ্ছে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে একদম খেয়ে ফেলব কিন্তু।
এই যে এখানে খাওয়াটার কথা বলা হলো, এই খাওয়ার সঙ্গে আবার পুলিশ কেস জড়িত। অবশ্য পুলিশ কেস জড়িত আরও অনেক খাওয়ার সঙ্গেই। যেমন কদিন আগে আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আজকাল তোকে দেখা যায় না যে? থাকিস কোথায়? বন্ধু বলল, তোর কাছে াে আর গোপন করার কিছু নেই। আসলে হয়েছে কী, বেশ কিছুদিন জেলে ছিলাম। আমি অবাক হয়ে বললাম, জেলে ছিলি কেন? খুন-খারাবি করেছিলি নাকি? বন্ধু বলল, আরে না। এই ধর, খাওয়ার অপরাধে আরকি। আমি অবাক হয়ে বললাম, খাওয়ার অপরাধে মানে! কী খেয়েছিলি? বন্ধু বলল, ঘুষ। আর এই ঘুষ খেতে গিয়েই খেয়ে ফেলেছিলাম আরেকটা জিনিস। সেটা হচ্ছে, ধরা। মানে ঘুষ খেয়ে ধরা খেয়েছিলাম, ধরা খাওয়ার পর খেয়েছিলাম জেলের ভাত। বলতে পারিস কদিন খুব খাওয়ার ওপরে ছিলাম। তাই দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। কদিন আগে আমার এক বড় ভাইকে দেখি ফুটপাথের এক রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছে। তাও ভরদুপুরে। আমি তাজ্জব বনে গেলাম। এমন শৌখিন ভাইটা কিনা রাস্তার পাশে খোলা রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে! আমি তার কাছে গেলাম। তিনি একটু বিব্রত হলেও নানা কথা বলে স্বাভাবিক করলাম। জানতে চাইলাম ঘর-সংসার রেখে এই হোটেলে কেন খাচ্ছে। ভাই বললেন, না খেয়ে করব কী! তোর ভাবির সঙ্গে অনেকদিন ধরেই সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। তাই দূরে দূরে থাকছি। বাইরে বাইরে খাচ্ছি। আমি বললাম, ভাবির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না যাওয়ার কারণ কী? ভাই বললেন, না, মানে আমার একটু খাওয়ার অভ্যাস আছে তো! এটা নিয়ে তোর ভাবি তুলকালাম বাধায়। আমি বললাম, আপনি কি ভাতটাত একটু বেশি খান? ভাই বললেন, আরে না। সুন্দরীদের দেখলে আমি শুধু ‘ক্রাশ’ খাই। আমি বললাম, অন্য মেয়েদের দেখে যারা ক্রাশ খায়, তারা বউয়ের পক্ষ থেকে বাঁশ খাবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার এক দুলাভাইয়ের নামে ব্যাপক অভিযোগ।
তিনি নাকি পুরো এলাকা গিলে খাচ্ছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এত খাই খাই কেন করেন বলুন তো? দুলাভাই বললেন, কেন করব না? আমার নানাও আমাকে বলে গেছেন খাওয়ার জন্য, আমার দাদাও বলে গেছেন খাওয়ার জন্য। তাই ডবল ডবল খাচ্ছি। আমার নাম কিন্তু খানে আলী খান। তার মানে নামের আগেও খান, পরেও খান। আগের ‘খান’টা পেয়েছি নানার কাছ থেকে। পরেরটা দাদার কাছ থেকে। কারণ, তারা উভয়েই ‘খান’ বংশের ছিলেন। যেহেতু উভয়েই আমাকে ‘খান’ ‘খান’ বলে খেতে বলছেন, তাই আমি খেয়েই যাচ্ছি।