নতুন বছরে সবকিছু নতুন করে শুরু করা হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু করোনায় নতুন বছরে সবকিছু নতুন করে শুরু করার জো নেই। বরং পুরনো জের টানতে হবে। আর ইতিমধ্যে এর লক্ষণও পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। আমার এক প্রতিবেশীর কথা দিয়েই শুরু করা যাক। নতুন বছরের প্রথম দিন এই প্রতিবেশীকে দেখলাম মুখ এমন কালো করে বাসা থেকে বের হচ্ছেন, যেন তিন-চারজন মিলে তাকে কিলিয়েছে। আমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, বছরের প্রথম দিন মানুষ হাসি-খুশি মুডে থাকে। আর আপনি আছেন স্যাড মুডে। কারণটা কী বলেন তো! প্রতিবেশী বললেন, আর বলবেন না ভাই। নতুন বছরের প্রথম দিন এসব হাবিজাবি খেতে ভালো লাগে? আমি বললাম, হাবিজাবি মানে? প্রতিবেশী বললেন, হাবিজাবি মানে হচ্ছে পান্তাভাত, মরিচপোড়া। সঙ্গে অবশ্যই এক টুকরো ইলিশও আছে। কিন্তু কথা সেটা না, নতুন বছরের প্রথম দিন আমি পান্তাভাতটা কেন খাব? আমি বললাম আমার প্রশ্নও তো সেটাই। কিন্তু ভাবির বক্তব্য কী? মানে কোন যুক্তিতে নতুন বছরের প্রথম দিন তিনি আপনার জন্য পান্তাভাতের ব্যবস্থা করেছে? প্রতিবেশী বললেন, কোন যুক্তিতে আবার! গত বছরের বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল করোনার কারণে ভয়ে ছিল, আতঙ্কে ছিল। তাই তখন পান্তাভাতের ব্যবস্থা করতে পারেনি। সেই বকেয়া কাজটা এখন করছে। কী একটা মুসিবত বলেন দেখি! আমার এক ছোটভাই বলল, সবসময় শুনে এসেছি, প্রেমের নাম বেদনা। কিন্তু বিশ^াস করিনি। এখন আর বিশ^াস না করে উপায় নেই। কারণ, পুরনো বছরের যন্ত্রণা নতুন বছরেও টানতে হচ্ছে। আমি বললাম, কী হয়েছে, একটু খুলে বললে ভালো হয়। ছোটভাই খুলেই বলল, প্রেমিকার জন্মদিন ছিল গত মে মাসে। কিন্তু তখন সারা দুনিয়ায় করোনার আতঙ্ক। এ জন্য জন্মদিনও পালন করা হয়নি, আমার কাছ থেকে যে দামি গিফট নেয়, সেটাও নিতে পারেনি। নিতে পারেনি তো কী হয়েছে! আগামী জন্মদিনে নেবে। কিন্তু না, তার কথা হচ্ছে, বকেয়া গিফট আগে পরিশোধ করতে হবে। তারপর আগামী জন্মদিনের হিসাব। ব্যস, এখন আমাকে গিফট কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে। আর এই চাপে নতুন বছরের শুরুতেই আমি ভর্তা হয়ে যাচ্ছি কর্তা। আমার এক বড়ভাই বললেন, কিছুদিন আগেও সেভাবে মাস্ক পরতে চাইতাম না। কিন্তু এখন পরি। পরতে বাধ্য হই। আমি বললাম, পরতে তো বাধ্য হবেনই। যেহেতু নতুন ধরনের করোনা শুরু হয়েছে। বড়ভাই বললেন, নারে পাগলা, করোনা টরোনা কিছু না। মাস্ক পরতে বাধ্য হই নতুন বছরে পুরনো যন্ত্রণার কারণে। আমি তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্য অনুরোধ করলাম। বড়ভাই অনুরোধটা রাখলেন, আমার বাড়ির পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা, প্রতি বর্ষার সিজনে ওই রাস্তায় প্রচুর খোঁড়াখুঁড়ি হয়। কিন্তু গত বর্ষার সিজনে করতে পারেনি। যেহেতু করোনা ভয়াবহ অবস্থায় ছিল। বিশ^াস করবি না, সেই বকেয়া খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে এখন। এখন তো মেঘ-বৃষ্টি নেই। এ জন্য রাস্তা খোঁড়ে আর ধুলাবালি ওড়ে। এই ধুলাবালি নাকে ঢুকতে ঢুকতে যদি নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, মুখে ঢুকতে ঢুকতে যদি দাঁতের ওপর ধুলাবালির স্তর পড়ে যায়, তাহলে মাস্ক না পরে উপায় আছে? আমার এক বন্ধু বলল, বাড়িওয়ালার যন্ত্রণায় আর বাঁচি না। আমি জানতে চাইলাম কী হয়েছে। বন্ধু বলল, কী আর হবে। অন্যসময় বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া একবারে এক হাজার টাকা বাড়াত। গতকাল এসে বলছে একবারেই নাকি পাঁচ হাজার টাকা বাড়াতে হবে। আমি বললাম, কেন? বন্ধু বলল, কেন আবার, করোনার সময় যে বাড়াতে পারেনি! তখন মানবতা দেখিয়েছে না? আমি বললাম, তখন মানবতা দেখিয়েছে ভালো কথা। এখনো অনুরোধ কর মানবিক হওয়ার জন্য। বন্ধু বলল, অনুরোধ করেছিলাম। বেটা দাঁত কেলিয়ে কী বলে জানিস? বলে আমার পক্ষে ‘মানবিক’ হওয়া সম্ভব না। কারণ, আমি ছাত্রজীবনে সায়েন্সের স্টুডেন্ট ছিলাম। মানবিকের স্টুডেন্ট হলে একটা কথা ছিল।