সোমবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রেমিকাকে বিয়ে করার পর

সৌরভ আহমেদ, শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

প্রেমিকাকে বিয়ে করার পর

জরিনা আমার সহপাঠী। চার বছর চুটিয়ে প্রেমের পর তাকেই বিয়ে করলাম। বাসরঘরে ঢুকে আমি থ। জরিনা বিয়ের শাড়ি খুলে টি-শার্টের ওপর হুডি পরে পায়চারি করছে। আমাকে দেখেই বলল, ‘এই চল চা খেতে যাই।’ আমি বোকার মতো তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বলে কি! বাসররাতে কেউ চা খেতে যায়, আমি বাপের জন্মে শুনিনি। জরিনা বলল, ‘কি ভাবছ? যাবে কিনা? তাই বল। যদি না যাও তাহলে এই পোশাকে আমি সকালে সবার সামনে বের হব। তখন টের পাবা কত ধানে কত চাল।’ আমি আমতা আমতা করছি দেখে সে বলল, ‘এত চিন্তা আপনার করার দরকার নেই। আপনি শুধু পেছনের দরজা দিয়ে বেরুনোর রাস্তাটা ক্লিয়ার করুন।’ তারপর একজনকে ফোন দিয়ে বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে আসতে বলল।

কোনোরকম একটা চাদর গায়ে দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে চুপিচুপি বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় গাড়ি দাঁড়ানো ছিল। উঠে পড়লাম দুজনে। দেখি পরিচিত সব বন্ধুরা। গাড়ি ছুটল ক্যাম্পাসের দিকে। সেখানে যেতেই দেখি বিশাল আয়োজন, বার্বিকিউ হচ্ছে। মনে হচ্ছিল আমরা সেই প্রেমের দিনগুলোতে আছি এখনো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মন্টু মামার দোকান থেকে সবাই একসঙ্গে চা খেলাম। তারপর বন্ধুরা আবার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল। চোরের মতো এসে দুজনে বাসায় ঢুকলাম। বাসররাতটা এভাবেই গেল। বিয়ের পর থেকে জরিনাকে আমি কিছুতেই চিনতে পারছি না। সে কখন কি করে বসে তার হিসাব নেই। সেদিন রাতে বলল, গান শুনতে ইচ্ছা করছে খুব। একটা গান শোনাও তো? আমি এবার আকাশ থেকে পড়লাম। কারণ সে জানে আমি গান গাইতে পারি না। কিন্তু এই অদ্ভুত বায়নার কারণ বুঝতে পারছি না। সে আবার শর্ত জুড়ে দিল, গান না শোনালে পাহাড় দেখাতে নিয়ে যেতে হবে। নাহলে সকালে উঠে বাপের বাড়ি চলে যাবে। এবার আসল উদ্দেশ্য টের পেলাম। জরিনা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে। বাধ্য হয়ে পরদিন বান্দরবান থেকে ঘুরে এলাম। অবশ্য আমারও যে ঘুরতে মন্দ লাগে, তা না। কিন্তু অফিস ম্যানেজ করা কঠিন। আজকাল উভয়সংকটে আছি। একদিকে চাকরি অন্যদিকে আমার প্রেমিকা থেকে প্রমোশন পাওয়া বউ! 

হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি প্রেমিকাকে বিয়ের আগে নিজের দুর্বল জায়গাগুলোর কথা বলা ঠিক হয়নি। এখন আর সেই কথা ভেবে কোনো লাভ নেই। বাসায় একটা অজানা ভয় নিয়ে ঢুকতে হয়। কখন কি ঘটে যায়। সেদিন অফিস থেকে ফিরলাম। হাত-মুখ ধুয়ে আসতেই আমাকে বলছে চা বানিয়ে খাওয়ালে আজ গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াব। আমি বোকার মতো প্রস্তাব গ্রহণ করলাম। খাওয়ার পর চা বানিয়ে এনে দুজনে একসঙ্গে চা খেলাম। তারপর যেই শর্তের কথা তুললাম। বলে কিনা, গলা বসে গেছে, মোবাইলে গান শুনে নাও। রাগে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে রইলাম। বিয়ের আগে প্রেম থাকলে নাকি বোঝাপড়া বা আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা ভালো থাকে। সেটাই হচ্ছে, স্ত্রী ঠিকই জানে, একটু পরই আমার রাগ কেটে যাবে। সুড়সুড় করে তার নতুন আবদার মেটানোর প্যারাটা ঘাড়ে  নেব!

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর