সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ফেসবুক লাইভে

ইকবাল খন্দকার

ফেসবুক লাইভে

স্ত্রীকে দেখানোর জন্য ফেসবুক লাইভের সময় স্বামীর যেখানে অবস্থান করা নিরাপদ

আমার এক ছোটভাই উল্টাপাল্টা ইংরেজি বলে। যে কারণে আশপাশের লোকজন কৌতুক শুনে না হাসলেও তার মুখের ইংরেজি শুনে হাসে। সেদিন তার সঙ্গে চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। কথা শেষ হওয়ার আগেই সে যখন চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল, আমি তাকে ধমক দিলাম। সে বলল, ভাই, বেয়াদবি নেবেন না। একটু জরুরি কাজ আছে তো, তাই যেতে হচ্ছে। আমি বললাম, জরুরি কাজ বলতে? কীসের জরুরি কাজ? ছোটভাই বলল, ‘লাইফ’ আছে। আমি হেসে ফেললাম। বললাম, উল্টাপাল্টা ইংরেজি বলার অভ্যাসটা ত্যাগ কর। শব্দটা ‘লাইফ’ না। লাইভ। ছোটভাই বলল, কেন? ‘লাইফ’ না কেন? আমি রেগে গিয়ে বললাম, আরে গাধা, লাইফ মানে হচ্ছে জীবন। আর লাইভ মানে হচ্ছে, সরাসরি। এবার বুঝে দেখ... ছোটভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, নতুন করে আর বুঝে দেখার কিছু নেই ভাই। যা বোঝার, আগেই বুঝে ফেলেছি। পানির অপর নাম জীবন। আর আমার কাছে ‘লাইভ’-এর অপর নাম হচ্ছে জীবন। আর ‘জীবন’-এর ইংরেজি হচ্ছে ‘লাইফ’। এবার বুঝলেন ‘লাইভ’কে কেন আমি ‘লাইফ’ বলি? ছোটভাইয়ের যুক্তি শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গেলেও চুপ থাকলাম। কারণ, যারা কথায় কথায় লাইভ করেন, তাদের সঙ্গে যুক্তিতে পারা কঠিন। তারা বিশ্বাস করেন, জগতের সেরা আবিষ্কার হচ্ছে, লাইভ। লাইভ না থাকলে জগৎ ধ্বংস হয়ে যেত। এক দিন আমার এক বন্ধুকে বললাম, এই যে লাইভের প্রতি আসক্তি, এটা কেন? যখন লাইভের এই উৎপাত ছিল না, তখন কি দুনিয়া চলেনি? তাহলে এখন কেন পান থেকে চুন খসলেই ফেসবুক লাইভে যেতে হবে? বন্ধু বলল, লাইভের প্রতি আসক্তি থাকা কিন্তু ভালো। কারণ, এরই মধ্য দিয়ে মুরব্বিদের উপদেশ মেনে চলার একটা সুযোগ তৈরি হয়। আমি অবাক হয়ে বললাম, কী বলছিস তুই এসব! মুরব্বিরা তো লাইভ জিনিসটাই ভালো চোখে দেখেন না। তাহলে লাইভের মাধ্যমে তাদের আদেশ মেনে চলার সুযোগ কীভাবে তৈরি হয়? বন্ধু বলল, মুরব্বিরা কী বলেছেন? বলেছেন, দশে মিলে করি কাজ...। যারা ফেসবুক লাইভ করেন, তারা কিন্তু কোনো কিছু একা দেখেন না। সবাইকে নিয়ে দেখেন। মানে সবার দেখার সুযোগ করে দেন। মানে দেখার কাজটা দশে মিলে করেন। বোঝা গেল বিষয়টা? আমার এক বড়ভাই বললেন, যারা নিজেদের ব্যবসার প্রচারণার জন্য ফেসবুক লাইভে যান, তাদেরটা ঠিক আছে। যেহেতু ব্যবসার জন্য প্রচারণাটা খুব জরুরি। তবে আমরা যারা নয়টা-পাঁচটা অফিস করি, তাদেরও যদি দিনে একাধিকবার ফেসবুক লাইভে যেতে হয়, এই দুঃখ কোথায় রাখি? আমি বললাম, কী হয়েছে, একটু খুলে যদি বলতেন। বড়ভাই মাস্ক খুললেন এবং বললেন, তোর ভাবী আমাকে সাংঘাতিক রকম সন্দেহ করে। এ জন্য রোজ অফিসে ঢুকেই একবার ফেসবুক লাইভে যেতে হয়। কারণ, সে দেখতে চায়, আমি অকারণে কোনো সুন্দরীর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি কিনা। আবার বের হওয়ার সময় একবার ফেসবুক লাইভে যেতে হয়। কারণ, সে দেখতে চায় আমি অফিস থেকে কার সঙ্গে বের হচ্ছি। মানে কোনো সুন্দরীর সঙ্গে একা লিফটে উঠেছি কি না। আবার ফেসবুক লাইভে যেতে হয়...। আমি বললাম, আর বলতে হবে না। আপনার সমস্যাটা আমি বুঝতে পেরেছি। তবে ভাবী আপনাকে ফেসবুক লাইভে কেন যেতে বলে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। ভিডিও কল দিলেই তো বোঝা যায়, আপনি কোথায় আছেন, কার সঙ্গে আছেন। বড়ভাই বললেন, ভিডিও কল দিলে তো কেবল সে একা দেখতে পাবে। সে আমাকে ফেসবুক লাইভে যেতে বলে এই জন্য, কারণ, সে তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দেখাতে চায়, বোঝাতে চায়, দেখ, আমার জামাই কত ভালো। অন্য সুন্দরীদের প্রতি একদমই তার টান নেই। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আজকাল দরজায় কলিংবেল বাজালেও নাকি কেউ কেউ ফেসবুক লাইভে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? আমি বললাম, বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলা দরকার। প্রতিবেশী বললেন, ঠিক আছে, বলেন। আমি বললাম, আপনি বাসায় চলে যান। আমি যা বলার,  ফেসবুক লাইভে বলব। আধা ঘণ্টা পরে লাইভে ঢুকতেছি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর