সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিয়ে কাহিনি

‘ভিকি কৌশল বিয়েতে যে পাগড়িটা পরেছে, এরচেয়ে হাজারগুণ ভালো পাগড়ি আছে এলিফ্যান্ট রোডে। দামে কম, টেকসই। অনেক দিন ব্যবহার করার মতো...’

ইকবাল খন্দকার

বিয়ে কাহিনি

► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বড় ভাই বললেন, কখন যে কার সম্মান বেড়ে যাবে, আগে থেকে বোঝা মুশকিল। আমার কথাই ধর। মানুষ বুঝবে কি, আমি নিজেও বুঝতে পারিনি হঠাৎ করে আমার সম্মান এতটা বেড়ে যাবে। আর সম্মানের দিক থেকে আমি একজন সুপারস্টারের পর্যায়ে চলে যাব। সবই কপাল, বুঝলি, সবই কপাল। আমি বললাম, সবই যে কপাল, এইটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আপনার কথার আগামাথা তো বুঝতে পারলাম না। কীভাবে আপনার সম্মান বেড়ে গেল, সম্মানের দিক থেকে কীভাবে আপনি সুপারস্টারের পর্যায়ে চলে গেলেন, একটু বুঝিয়ে বলেন। বড় ভাই বললেন, বুঝিয়ে তো অবশ্যই বলব। তার আগে বল সালমান খানকে তুই সুপারস্টার মনে করিস কি না। আমি বললাম, মনে না করার কী আছে? অবশ্যই মনে করি। কিন্তু এখানে সালমান খানের কথা আসছে কেন? বড় ভাই বললেন, সালমান খান যদি সুপারস্টার হয়, তাইলে আমিও সুপারস্টার। আমি আকাশ থেকে পড়ে বললাম, কীভাবে? বড় ভাই বললেন, কীভাবে আবার? সালমান খানও ক্যাটরিনার বিয়েতে দাওয়াত পায় নাই, আমিও দাওয়াত পাই নাই। তবে আরেকটা বিষয় বিবেচনা করলে বলা যায়, সুপারস্টার হওয়ার দিক থেকে আমি সালমান খানের চেয়েও একধাপ এগিয়ে। আমি বললাম, কোন বিষয়টা বিবেচনা করলে? বড় ভাই বললেন, সালমান খান সৌদি আরব গেছে কবে? ক্যাটরিনার বিয়ের দিন। আর আমি চাকরির সুবাদে সৌদি আরব গেছিলাম কবে? আরও বছরপাঁচেক আগে। তাহলে আমি কি সালমান খানের চেয়ে বছরপাঁচেক এগিয়ে আছি না? আমার এক ভাবি বললেন, ক্যাটরিনার বিয়ের সবকিছুই ঠিক আছে, তবে একটা জায়গায় ঘাটতি মনে হলো। আমি সবিস্ময়ে জানতে চাইলাম, কোথায় ঘাটতি? ভাবি বললেন, না, মানে সেভাবে ঘাটতি বলা যায় না, আবার বলাও যায়। ওই যে শাড়ির বিষয়টা আরকি। আমি আবারও একই রকম বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলাম, শাড়িতে ঘাটতি? বলেন কী! কী ঘাটতি? ভাবি বললেন, আমি ঠিকঠাক দেখেছি কি না, বুঝতে পারছি না। তবে যতটুকু দেখেছি, মনে হয়েছে শাড়িতে বসানো পাথরগুলো একটু ছোট। আরেকটু বড় পাথর বসানো শাড়িও কিন্তু পাওয়া যায়। একটু সময় নিয়ে খুঁজলেই পেয়ে যেত। আসলে হয়েছে কী, বিয়ের কেনাকাটা করতে হয় সময় নিয়ে। এসব কাজ তাড়াহুড়া করে করতে গেলে একটু আধটু ঘাটতি থেকে যেতেই পারে।

আমার এক ছোট ভাই বলল, আপনি তো জানেন ভাই, ক্যাটরিনাকে আমি খুব পছন্দ করতাম। মাঝে মধ্যে স্বপ্নও দেখতাম তাঁকে নিয়ে। কিন্তু আরেকজন তাঁকে বিয়ে করে ফেলল। বিশ্বাস করেন ভাই, যখন থেকে শুনলাম ওই বেটা তাঁকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তখন থেকে পড়ার টেবিলে বসলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি বললাম, এ ধরনের পরিস্থিতিতে এমন হতেই পারে। তবে পড়ায় বসে মেজাজ খারাপ করলে চলবে না। ছোট ভাই বলল, ঠিক আছে তাহলে। আজকেই আমি টেবিল থেকে বাংলা ব্যাকরণ বইটা সরিয়ে রাখব। কারণ, এটা দেখলেই আমার মেজাজ বেশি খারাপ হয়। এবার আমার তাজ্জব হওয়ার পালা, বাংলা ব্যাকরণ বই দেখলে মেজাজ বেশি খারাপ হয় মানে! ছোট ভাই বলল, না মানে, বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের গায়ে বিশেষ একটা কথা লেখা আছে তো! যা দেখলে ক্যাটরিনার জামাইর কথা মনে পড়ে। আর এই ব্যাটাই তো আমার স্বপ্নের মানুষটাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। তুই শুধু আমাকে এটা বল, তোর বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের গায়ে এমন কী লেখা আছে, যা দেখলে ক্যাটরিনার স্বামীর কথা মনে পড়ে। ছোট ভাই বলল, বাংলা ব্যাকরণ শেখার কলা-‘কৌশল’। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আপনার ভাবিকে নিয়ে আর পারি না। সবকিছুতে তার নাক গলাতে হবে। ক্যাটরিনার বিয়ে হলো, সেটা নিয়েও সে নাক গলিয়েই যাচ্ছে। আমি জানতে চাইলাম তার নাক গলানোর প্রক্রিয়াটা কী। মানে কী বলছেন, কী করছেন। প্রতিবেশী বললেন, সে বলছে, ক্যাটরিনার তুলনায় ছেলেটা মানে জামাইটা নাকি অত যোগ্য না। ক্যাটরিনা যদি নিজের সিদ্ধান্তে হুটহাট বিয়ে না করে তার মতো মানে আপনার ভাবির মতো দুই-চারজনের কাছ থেকে পরামর্শ নিত, তাহলে নাকি আরও ভালো ছেলে পেত। কারণ, তাদের হাতে নাকি আরও ভালো ছেলে ছিল। আমার এক ছোট ভাই বলল, ভাই, আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। ভিকি কৌশল কেনাকাটা করার জন্য এত জায়গায় যেতে পেরেছে, আমাদের এলিফ্যান্ট রোডে আসতে পারল না? আমি বললাম, এলিফ্যান্ট রোডে আসবে কেন? ছোট ভাই বলল, সে বিয়েতে যে পাগড়িটা পরেছে, এরচেয়ে হাজারগুণ ভালো পাগড়ি আছে এলিফ্যান্ট রোডে। দামে কম, টেকসই। অনেক দিন ব্যবহার করার মতো। আমি বললাম, পাগড়ি অনেক দিন ব্যবহারের কী আছে? ছোট ভাই বলল, কেন, শীত বেশি পড়লে কি কানটুপির বিকল্প হিসেবে পরা যায় না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর