সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নায়িকার বিয়ে, ফুটবলারের বিশ্বকাপ ও অন্যান্য...

সাধারণ মানুষ ভাবে, বিয়ের পর খাব কী? আর নায়িকারা ভাবে, বিয়ে মানেই সারা জীবন নিশ্চিন্তে খেয়েপরে বাঁচা। ইভেন্টের রাইটস তাদের যত টাকা দেয়, অত টাকা সিনেমাও দেয় না...

ইশতিয়াক আহমেদ

নায়িকার বিয়ে, ফুটবলারের বিশ্বকাপ ও অন্যান্য...

নায়িকাদের বিয়ে নিয়ে সবচেয়ে ভালো কথাটি বলেছিলেন এরিস্টটল। কথাটি মনে নেই, তবে কথাটি যে খুব ভালো ছিল তা মনে আছে। যাই হোক, আগে নায়িকারা বিয়ে করলে সাধারণ মানুষ কষ্ট পেত, আত্মহত্যা করত। এখন ট্রল করে।

 

করোনার পর বিশ্ব অর্থনীতির নানা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নায়িকাদের পারিশ্রমিকও অনেক কমে গেছে। বিষয়টা বেদনাদায়ক। তবে তার মাঝেও কিছু বিয়ে নিয়ে চলে তুলকালাম। সিনেমা হিট না কিন্তু নায়িকার বিয়ে হিট। এটা অবশ্য ভিজ্যুয়াল ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুসংবাদ। যেখানে সাধারণ মানুষের বিয়েই একটা সিনেমার মতো হয়ে গেছে, সেখানে নায়িকাদের বিয়ে তো বড় পর্দায় দেখানোর জায়গায় চলে গেছে।

 

শোনা যাচ্ছে, হলিউড, বলিউড কিংবা পাশের কলকাতায়ও তারা বিয়ের এই ইভেন্টের রাইটসও বিক্রি করে ফেলছেন। ইভেন্ট কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা দিয়ে সেসব কিনে নিচ্ছে। আশার কথা,

 

এখানেই নায়িকা আর সাধারণ মানুষের পার্থক্য।

সাধারণ মানুষ ভাবে, বিয়ের পর খাব কী? আর নায়িকারা ভাবে, বিয়ে মানেই সারা জীবন নিশ্চিন্তে খেয়েপরে বাঁচা। ইভেন্টের রাইটস তাদের যত টাকা দেয়, অত টাকা সিনেমাও দেয় না। সিনেমা হিট- ফ্লপের ব্যাপার আছে। বিয়ের ইভেন্টে নেই।

 

অতি সম্প্রতি ক্যাটরিনা কাইফ বিয়ে করে এমন একটা তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের কার্ড, কোথায় খাবেন, কী করবেন, গেস্ট কোথায় থাকবে- এসব নিউজ নিয়ে মাসখানেক ধরে মিডিয়াকে অস্থির করে তুলেছেন। ক্যাটরিনা আর তাঁর হবু স্বামী কোথায় খাচ্ছেন, এটা ভেবে খেতে পারছেন না মিডিয়া ও সোশাল মিডিয়াকর্মীরা। কোথায় ঘুমাবেন এই নিউজ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঘুমাতে পারছেন না যেমন রিপোর্টাররা, তেমনি ঘুমাতে পারছেন না নেটিজনরাও। নিজে দাওয়াত পায়নি কিন্তু কেমন আয়োজন হয়েছে, কী খাইয়েছে, তা নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই।

এটা নিয়ে এক ছোট ভাইয়ের মধ্যে ব্যাপক অস্থিরতা দেখে বললাম, ভাই, তাদের বিয়ে নিয়ে তুমি টেনশন করিও না। বিয়ে যখন ইভেন্ট হয়ে যায়, তখন এটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবেই। এটা বাংলাদেশের কোনো জেলার বিয়ে না যে, মাংস কম হওয়ায় মারামারি লেগে বিয়ে ভণ্ডুল হয়ে যাবে। তারপর ছোট ভাই আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল বলে, ভাই, ওই জেলার বিয়েগুলো এমন ইভেন্ট কোম্পানির কাছে দেওয়া যায় না? বললাম, এভাবে তো ভেবে দেখিনি।

 

তবে সেসব বিয়েতে ফটোগ্রাফার ভিডিওগ্রাফার হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লাগবে।

খাবারের টেবিল পাহারা দিতেও লাগবে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে খেতে বসাবে, পুলিশ আপনাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। কেউ এক পা নড়বেন না। যা মাংস দিয়েছে তা দিয়েই খেয়ে উঠবেন, কোনো চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।

 

যাক, নায়িকার বিয়েতে ফিরি। সরি, নায়িকার বিয়েতে ফেরার কিছু নাই। বিয়ের সবকিছু তো শেষ। তাই এই শীতে জ্যাকেট পরে ভিক্যাটের বিয়ের নিউজ পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ দেখছি না আপাতত।

 

তবে, আমি এই হ্যাসট্যাগ ভিক্যাট বিষয়টার বিপক্ষে। দুজনের নাম মিলিয়ে এভাবে করার যে কালচার এটা থেকে বিশ্বনায়িকাদের বের হয়ে আসতে হবে। কারণ, এটা একসময় বাংলাদেশে আসবে এবং নাম মিলিয়ে রাখতে ঘটতে পারে বিদঘুটে যত ঘটনা।

 

যেমন, ধরি, শাবনুর আর রিয়াজের বিয়ে হলে, তার হ্যাসট্যাগ কী হতো? ‘শারি।’ লিখিত বানান যাই হোক, মানুষ উচ্চারণ করত শাড়ির বিয়ে। ট্রল করত শাড়ির বিয়ে নিয়ে। কিংবা আরও ভয়াবহ যদি ধরি, শাকিল খান ও পপির বিয়ে হলে কী হতো? শাপের বিয়ে। তা অভিশাপের ‘শাপ’ই হোক বা উচ্চারণ করে ‘সাপে’র বিয়েই বলুক। কী ভয়াবহ! ভাবতেই শিউরে ওঠে।

 

তবে শেষ কথা বলি, আগামীতে নায়িকার সিনেমার পাশাপাশি একটা সুপারহিট বিয়েও লাগবে। না হয় ক্যারিয়ার পূর্ণ হবে না।

অনেক বিখ্যাত ফুটবলারের মতো হয়ে যাবে বিষয়টা, ব্যক্তিগত অনেক অর্জন আছে। কিন্তু বিশ্বকাপ নেই।

সর্বশেষ খবর