আমার এক বড়ভাই বললেন, চুন খেয়ে মুখ পুড়লে মানুষ দই দেখেও ভয় পায়। আমি বললাম, হঠাৎ এই পুরনো কথাটা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলার কারণ কী? বড়ভাই বললেন, বলার কারণ হচ্ছে জিনিসপত্রের দাম। আমি বললাম, এটাও কিন্তু পুরনো কথা। এই কথার সঙ্গে চুন খেয়ে মুখ পুড়ে দই দেখে ভয় পাওয়ার কী সম্পর্ক? বড়ভাই বললেন, সম্পর্ক আছেরে পাগলা! জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ার কারণে আমি বাজারের নাম শুনলেই ভয় পাই। তবে সেটা কাঁচাবাজার, মাছবাজার, মাংসের বাজার। অথচ তোর ভাবি কী সুন্দর করেই না কক্সবাজার যাওয়ার অফার করল। তাও শ্বশুরের টাকায়। কিন্তু যেহেতু জায়গাটার নামের সঙ্গে ‘বাজার’ যুক্ত আছে, মানে কক্সবাজার, ব্যস, আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমার ভয় কাটাতে যে পরিমাণ সময় লাগল, ততক্ষণে তোর ভাবি তার বাবার টাকায় কক্সবাজার যাওয়ার মাগনা অফারটা ফিরিয়ে নিল। আফসোস! আমার এক ছোটভাই বলল, ছাত্রজীবনে স্যাররা বিশেষ কিছু প্রাণীর সঙ্গে আমাকে তুলনা করেছেন। তখন বিষয়টি নিয়ে মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, মন খারাপ করা উচিত হয়নি। বরং নিজেকে দামি এবং মূল্যবান মনে করে গর্বিত হওয়া উচিত ছিল। আমি জানতে চাইলাম ছোটভাইকে ছাত্রজীবনে তার স্যাররা কোন প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করেছিল। সে বলল- গরু, বলদ। আপনি চিন্তা করেন ভাই, আমাকে কত দামি প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। গরুর মাংসের দাম আজ কত বেড়ে গেছে! আমি বললাম, তোর কথায় যুক্তি আছে। তবে তোর কপাল ততটা ভালো না। আর ভালো না বলেই তোর স্যাররা তোকে ‘গরু’ ডেকেছে। ডাকা উচিত ছিল ‘ছাগল’। এখন গরুর মাংসের চেয়ে ছাগল আইমিন খাসির মাংসের দাম কিন্তু বেশি। আমার এক বন্ধু বলল, এখন কাঁচাবাজারে আগুন জ¦লে। তবে এ আগুনের জন্য আমাদেরও দায় আছে। কেন এত দাম দিয়ে বেগুনি খেতে হবে? বেগুনি খাওয়া কমিয়ে দিলেই তো বেগুনের দাম কমে যায়। এবার পাশ থেকে একজন বলে উঠল, আপনি একদম ঠিক বলেছেন। বেগুনের দাম কমানোর স্বার্থে আমি শুধু বেগুনি খাওয়া-ই কমাইনি, বেগুনি কাপড় পরাও ছেড়ে দিয়েছি। এই যেমন ধরেন আপনার ভাবি খুব শখ করে আমার জন্য বেগুনি রঙের একটা টাই কিনেছিল। আমি কিন্তু টাইটা পরছি না। আমার এক ভাবি বললেন, আপনার ভাইকে আজকাল কোনোভাবেই বাজারে পাঠানো যাচ্ছে না। কী করি বলেন তো! আমি বললাম, তাকে বাজারে যেতে বাধ্য করতে হলে আপনাকে একটা কৌশল অবলম্বন করতে হবে। ভাবি জানতে চাইলেন, কী ধরনের কৌশল? আমি বললাম, আপনাকেই বাজারে যেতে হবে। ভাবি বিরক্ত হয়ে বললেন, ধুর, এটা কোনো কৌশল হলো? আমি বললাম, আপনি যদি বিশ্বাসযোগ্য ভঙ্গিতে একটা কথা বলতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবনেও আপনাকে বাজারে পাঠাবে না। আপনি বলামাত্র ব্যাগ নিয়ে বাজারে দৌড় দেবেন। এবার ভাবি জানতে চাইলেন কথাটা কী। আমি বললাম, আপনি বাজার থেকে ফিরে বলবেন, আজ কাঁচাবাজারে আমার এক ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা হলো। ছেলে ফ্রেন্ড। কলেজ লাইফে সে আমাকে পছন্দ করত। জানতে পারলাম, সে নাকি এখানে প্রায়ই বাজার করতে আসে। ব্যস!