সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সব কথা ফেসবুকে

‘কোনো স্ট্যাটাসে টেনেটুনে পঞ্চাশটার মতো লাইক পড়ে যায়, তাহলে তার মেজাজ ভালোই থাকে। যদি দশটার কম লাইক পড়ে তাহলেই মেজাজ চড়ে যায়’

ইকবাল খন্দকার

সব কথা ফেসবুকে

• আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর • কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোট ভাই বলল, আমি মনে করি, একসময় ঘটকালির পেশাটা থাকবে না। সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমি বললাম, ঐতিহ্যবাহী একটা পেশা কোনোভাবেই পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে না। তবু তুই যেহেতু বলছিস, নিশ্চয়ই কোনো যুক্তি আছে। বল শুনি কী যুক্তি। ছোট ভাই বলল, ভাই, যুক্তি খুবই নরমাল। আগে ঘটকরা ঘটকালি করত পাত্র-পাত্রীর স্বভাব-চরিত্র, আচার-ব্যবহার ইত্যাদি জানার জন্য অথবা ঘটকের মাধ্যমে পাত্রপক্ষ জানত পাত্রী সম্পর্কে, পাত্রীপক্ষ জানত পাত্র সম্পর্কে। এখন আর এসবের দরকারই নেই। পাত্র আর পাত্রী কেমন সেটা জানা যায় তাদের কয়েক মাসের স্ট্যাটাস দেখলেই। যেহেতু এখন কেউই পেটে কথা রাখে না। কথা রাখে ফেসবুকে। অতএব এখন মানুষ চেনা কয়েক মিনিটের ব্যাপার। আগে শিল্পীরা গান গাইত ‘মানুষ চেনা দায়’, এ গানও এখন চলে না। এখন মানুষ চেনা খুবই সহজ। যদি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকে। আমার এক বড় ভাই বললেন, ফেসবুক আছে বলে রক্ষা। নইলে কবেই বাসাটা ছেড়ে দিতে হতো। বাড়িওয়ালা যা কড়া! আমি ভাইয়ের কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। তিনি বললেন, আগে আমি আর তোর ভাবী দিন নেই রাত নেই ঝগড়া করতাম। আর এ ঝগড়ার শব্দ বাড়িওয়ালার কানে যেতেই এই লোক তেড়ে এসে বলত, যাতে বাসাটা ছেড়ে দিই। দুয়েকটা বাসা ছেড়েছিও। কারণ তখন আমরা ফেসবুকে ততটা আসক্ত ছিলাম না। এখন এত বেশি আসক্ত হয়েছি যে, পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য সব ধরনের ঝগড়াই এখন আমরা করে থাকি ফেসবুকে। তাই বাড়িওয়ালা শুনতে পায় না, আমাদেরও বাসা ছাড়ার হুমকি দিতে পারে না। ও, সুবিধা আরেকটা আছে। আগে যখন মুখোমুখি ঝগড়া করতাম, তখন তোর ভাবী আমার দিকে এটা-ওটা ছুড়ে মারত। ফেসবুকের ঝগড়াটা কিন্তু সেদিক থেকে নিরাপদ। মোটকথা সুবিধা আর সুবিধা।

আমার এক বন্ধু বলল, এই যে মানুষ কিছু একটা হলেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, এটা কি ঠিক? আমি বললাম, হয়তো ঠিক না। কেন, তুই কথায় কথায় স্ট্যাটাস দিস না? বন্ধু বলল, জি না। আমি ভিডিও দিই।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি না। সারা দিন ফেসবুক আর ফেসবুক। দিনে দশ-বারোটা করে স্ট্যাটাস দেয়। আর মেজাজ দেখায় আমাদের সঙ্গে। গতকালও দামি একটা শোপিস ভেঙে ফেলল। আমি অবাক হয়ে বললাম, এটা কেমন কথা! ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার সঙ্গে ভাঙচুরের কী সম্পর্ক? প্রতিবেশী বললেন, গভীর সম্পর্ক। আসলে ঘন ঘন স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তার কোনো স্ট্যাটাসেই তেমন লাইক পড়ে না। তবে যদি টেনেটুনে পঞ্চাশটার মতো লাইক পড়ে যায় তাহলে তার মেজাজ ভালোই থাকে। যদি দশটার কম লাইক পড়ে তাহলেই মেজাজ চড়ে যায়। আর এর কম পড়লে সরাসরি চলে যায় ভাঙচুরে। আর যদি এক শ’র বেশি লাইক পড়ে যায় তাহলে আমাদের জন্য অনলাইনে বিরিয়ানি অর্ডার করে। আমি বললাম, তাহলে এক শ’র বেশি লাইক পড়া একটু বিপজ্জনকই বলা চলে। যেহেতু এ বয়সে বিরিয়ানি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর